Bihar Assembly Election

বিজেপির স্বার্থেই কি জোটে মায়া, ওয়েইসিরা

রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই জোটের লক্ষ্যই হল, বিহারে বিজেপি-বিরোধী পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, দলিত ও মসুলিম ভোটে ভাগ বসানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৫৩
Share:

আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, উপেন্দ্র কুশওয়াহা ও মায়াবতী (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র

একটি দল কেবল ভূমিপুত্রের। বাকি দু’জনের একজন প্রতিবেশী রাজ্যের। অন্য জন সদূর দক্ষিণের। তার পরেও ওই তিন দল এক আশ্চর্য জোট গড়ে গত কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যাকে কেন্দ্র করে বিহারে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই জোটের উদ্দেশ্য কি ক্ষমতা দখল? না কি দলিত-মুসলিম ভোট কাটাকাটি করে বিজেপিকে সুবিধে করে দেওয়া?

Advertisement

গত কাল পটনায় জোট ঘোষণা করে উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল আরএলএসপি, আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল এমআইএম ও মায়াবতীর দল বিএসপি। তিন দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হয়েছে কুশওয়াহাকে। এর মধ্যে কুশওয়াহার ভিত্তি হল তাঁর নিজের জাতের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোট, এমআইএমের শক্তি মুসলিম ভোট। আর মায়বতীর দলিত সমাজ। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই জোটের লক্ষ্যই হল, বিহারে বিজেপি-বিরোধী পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, দলিত ও মসুলিম ভোটে ভাগ বসানো। যাতে ফায়দা পায় বিজেপি।

কুশওয়াহার লক্ষ্য নীতীশ তথা জেডিএই প্রার্থীদের যেনতেন ভাবে হারানো। নীতীশ ও তিনি দু’জনেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধি। তাই নীতীশের মতোই অতি পিছড়ে বর্গ বা ইবিসি শ্রেণির ভোটের জন্য ঝাঁপিয়েছেন উপেন্দ্র। অনেকের মতে, এতে লাভ হচ্ছে বিজেপিরই। নীতীশ অতি পিছড়ে শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করলেও তাতে লাভ বিশেষ হয়নি। পাশাপাশি এঁদের বড় অংশই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। যাঁরা লকডাউনের ফলে রুটি-রুজি তো হারিয়েইছেন, উপরন্তু কোনও ভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে ঘরে ফিরেছেন। মোদী সরকারের উপর এঁদের ক্ষোভ ভালই টের পাচ্ছে বিজেপি। ওই বিক্ষুব্ধ ভোট একত্রিত ভাবে কংগ্রেস-আরজেডি ও বামেদের মহাজোটের প্রার্থীর ঘরে গেলে বিজেপির পক্ষে জেতা আসন বাঁচানো কঠিন হবে। বিজেপির আশা, বিক্ষুব্ধদের একটি বড় অংশের কাছে উপেন্দ্র বিকল্প হয়ে উঠতে পারলে বিরোধী ভোটে ভাঙন ধরবেই। যার ফায়দা পাবে তারা। পাশাপাশি উপেন্দ্রর মূল লক্ষ্য নীতীশকে দুর্বল করা। জোটের অঙ্কে নীতীশ যত দুর্বল হবেন, ততই সুবিধে হবে বিজেপির। যদিও নয়া জোটের মুখপাত্র পি সুমনের দাবি, ‘‘আমরা কাউকে সাহায্য করতে লড়ছি না। দল জেতার লক্ষ্যে লড়ছে।’’

Advertisement

হায়দরাবাদের দল এমআইএমের বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ রয়েছে যে, তারা ভোটমুখী রাজ্যে মুসলিম ভোট বিভাজনের লক্ষ্যেই প্রার্থী দিয়ে থাকে। যার ফায়দা পায় বিজেপি। অতীতে বিহারের লোকসভা নির্বাচন থেকে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন— সর্বত্রই এক ছবি দেখা গিয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে এমআইএম মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করানোয় সংখ্যালঘু ভোট ভাগের ফায়দা পেয়েছে বিজেপি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সংখ্যালঘু প্রার্থী না দিয়েও আসন জিতে নিয়েছে বিজেপি। এক এমআইএম নেতার কথায়, ‘‘আমরা মূলত উত্তর বিহারের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে লড়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য পূর্ব ভারতে শক্তি বাড়ানো।’’ উত্তর বিহারের একাধিক আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল কংগ্রেস। সেগুলিতে এমআইএম লড়লে আখেরে মহাজোট দুর্বল হবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। গত ছ’বছরের মোদী শাসনে ক্ষুব্ধ দলিত সমাজের বড় অংশ। হাথরসের ঘটনা সেই ক্ষোভে আরও ইন্ধন দিয়েছে। বিহারের প্রায় ১৮-২০ শতাংশ দলিত ভোট রয়েছে। কংগ্রেস ও আরজেডির নিজস্ব ভোটের পাশাপাশি দলিত ভোটের একটি বড় অংশ মহাজোটকে সমর্থন করলে এনডিএ-র ক্ষমতা হারানো অনেকাংশেই নিশ্চিত। অনেকের মতে, সেই ভোটে ভাঙন ধরাতেই মাঠে নেমেছেন মায়াবতী। এ দিনই দলিত মন জিততে মায়াবতীর দলের প্রতিষ্ঠাতা কাঁসিরামের জন্মতিথিতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন