চেটিয়াকে এনে এক মাসেই শান্তি চুক্তি চায় বিজেপি

ব্রডগেজ ট্রেন, হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব, ছয়টি জনগোষ্ঠীকে উপজাতি তালিকাভুক্ত করা এবং আলফার সঙ্গে শান্তি চুক্তি— অসমে আগামী বিধানসভা ভোটে আটঘাট বেঁধে নামতে এইগুলিই হল বিজেপির বড় হাতিয়ার। প্রথমটির পরিকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

ব্রডগেজ ট্রেন, হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব, ছয়টি জনগোষ্ঠীকে উপজাতি তালিকাভুক্ত করা এবং আলফার সঙ্গে শান্তি চুক্তি— অসমে আগামী বিধানসভা ভোটে আটঘাট বেঁধে নামতে এইগুলিই হল বিজেপির বড় হাতিয়ার। প্রথমটির পরিকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষ। ‘উপযুক্ত’ সময়ে ট্রেন চালু করলেই হল। নাগরিকত্ব প্রদান ও উপজাতি তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে খসড়া বিল তৈরি। বাকি ছিল শান্তি চুক্তি। যেখানে এনডিএ-র কাছে বড় কাঁটা ছিল দু’টি। অনুপ চেটিয়াকে ফেরানো এবং পরেশ বরুয়াকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া। সেই ক্ষেত্রেও আজ অনেকটাই এগিয়ে গেল কেন্দ্র। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রায় এক দশক ধরে ঝুলে থাকা অনুপ চেটিয়ার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে ‘অতি-সক্রিয়তা’ না দেখালে এই বছরও তাকে হাতে পাওয়া যেত না। পিছিয়ে যেত কেন্দ্র-আলফা শান্তি আলোচনা। পরের বছর সম্ভবত বিহুর পরেই অসমে নির্বাচন। অনুপকে পাওয়ায় এই বছরের মধ্যে শান্তি চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র।

Advertisement

আজ অনুপ চেটিয়ার প্রত্যর্পণের কথা ঘোষণা করার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বিশেষ জোর দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগ’-এর উপরে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র আলফা সমস্যার সমাধানে খুবই আন্তরিক। তাই প্রধানমন্ত্রী নিজে চেটিয়াকে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’’ আলফা শান্তি আলোচনায় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিল অসমের ছ’টি জনগোষ্ঠী কোচ-রাজবংশী, চা শ্রমিক, তাই-অহোম, মরান, মটক ও চুতিয়াদের উপজাতি তালিভুক্ত হওয়ার উপরে। রিজিজু জানান, উপজাতি তালিকাভুক্ত করা সংক্রান্ত ফাইল এখন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর নভেম্বর মাসে লোকসভা অধিবেশনের আগেই বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলা যাবে।

আলফার আলোচনাপন্থী নেতা মৃণাল হাজরিকা বলেন, ‘‘কেন্দ্র আমাদের আশ্বাস দিয়েছে নভেম্বরের শেষে পরের দফার শান্তি আলোচনাতেই চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। আমাদের প্রধান দাবিগুলি মোটামুটি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আশা করি এই বছরই চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যাবে।’’

Advertisement

ঘটনার পিছনের রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে সতর্ক হয়ে মুখ খুলছেন আলফা নেতারা। আত্মসমর্পণ করা এক আলফা নেতার মতে, সশস্ত্র সংগ্রামে থাকার সময়ও শাসক বা বিরোধী দল আমাদের সাহায্যের উপরে নির্ভর করেছে। আলফা সমস্যার সমাধান হলে বা শান্তি চুক্তি হলে তার একটা ইতিবাচক প্রভাব তো থাকবেই। মানুষের মনে এখনও আলফার প্রতি একটা সহানুভূতি রয়েছে। ভোটের আগে সেই সহানুভূতিটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘আলফা কোনও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে তিন দশকের লড়াই চালায়নি। এত হাজার প্রাণের বিনিময়ে যে বোঝাপড়া হয়েছে, তাকে রাজনৈতিক নেতাদের ফায়দা লোটার অস্ত্রে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।’’

অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অবশ্য চেটিয়াকে অসমে স্বাগত জানিয়ে দাবি করেন, যে প্রত্যপর্ণ চুক্তির মাধ্যমে চেটিয়ার ভারতে ফেরা— সেই চুক্তির কাজ ইউপিএ আমলেই হয়েছে। তিনি নিজে এই প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়ে বার বার কেন্দ্রকে চাপ দিয়েছিলেন।

কিন্তু পরেশ বরুয়াকে বাদ দিয়ে আলফার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে সত্যিই কী লাভ? পুলিশের মতে, চেটিয়াকে ফিরিয়ে এবং শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করিয়েও পুরোপুরি শান্তি আনা সম্ভব হবে না। কারণ, আলফার মূল সামরিক শক্তিই পরেশ বরুয়ার হাতে। তিনি লড়াই চালাতে অনড়। ঘটনাক্রমে পরেশ ও অনুপ জেরাই গাঁওয়ে প্রতিবেশী।

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করছেন, অনুপ চেটিয়া শান্তি আলোচনায় যোগ দিলে পরেশ আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘‘অসমের মানুষ শান্তি চান। তাঁরা নাশকতায় ক্লান্ত। আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ জানাচ্ছি চেটিয়াকে দ্রুত অসমে পাঠানো হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন