রাজধানীর সঙ্গে শিলচরের সম্পর্ক গড়ল সম্পর্কক্রান্তি

দাবি ছিল, আশাও ছিল। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি শিলচরের দিল্লি-সংযোগ হবে, ভাবতে পারেননি কেউ। তিন মাসে তিন ট্রেন। ২১ নভেম্বর প্রথম ব্রডগেজে শিলচর-গুয়াহাটি।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

রাজধানী দিল্লির সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যুক্ত হল শিলচর। শনিবার দিল্লির পথে রওনা হওয়ার আগে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। শিলচর স্টেশনে স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

দাবি ছিল, আশাও ছিল। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি শিলচরের দিল্লি-সংযোগ হবে, ভাবতে পারেননি কেউ। তিন মাসে তিন ট্রেন। ২১ নভেম্বর প্রথম ব্রডগেজে শিলচর-গুয়াহাটি। ১ ফেব্রুয়ারি শিলচর-কলকাতা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। আর আজ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু সবুজ পতাকা নাড়িয়ে পূর্বোত্তর সম্পর্কক্রান্তি স্পেশালকে শিলচর স্টেশন থেকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন।

Advertisement

সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের চার সাংসদ। শিলচরের সুস্মিতা দেব, করিমগঞ্জের রাধেশ্যাম বিশ্বাস, গুয়াহাটির বিজয়া চক্রবর্তী ও মঙ্গলদৈয়ের রমেন ডেকা। ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি, চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার অজিত পণ্ডিত, ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এ দৌলত।

একই সঙ্গে রিমোট কন্ট্রোলে বদরপুর থেকে দু’টি মালগাড়িকেও আজ যাত্রা শুরুর সঙ্কেত দেন প্রভু। সেই সঙ্কেত পেয়ে নতুন বসানো ব্রডগেজ লাইনে ত্রিপুরার জিরানিয়া ও মণিপুরের জিরিবাম পর্যন্ত বাণিজ্যিক মালগাড়ির চলাচল শুরু হল। টিভির বড় পর্দায় ট্রেন দু’টিকে দেখা গেল। আর চাক্ষুষ দেখা গেল সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসকে।

Advertisement

শালগঙ্গারপারের প্রণয় নাথ দিল্লিতেই একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বছরে একবার বাড়ি আসেন। এ বারও এসেছিলেন। দু’দিন আগেই রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিলচর থেকে সরাসরি ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে পুরনো সূচি বদলে ফেলেন তিনি। আর এবার সঙ্গে নিলেন বৃদ্ধা মাকেও। এস-৪ কামরার ২৫, ২৬ নম্বর আসনে বসতে বসতে বললেন, ‘‘ক’বছর ধরেই মাকে নিয়ে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু ট্রেন বদলানোর কথা ভেবে সাহস পেতাম না।’’ আকাশবাণী শিলচরের বার্তা সম্পাদক সঞ্জীবকুমার শর্মার বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। দিল্লিতে বহু আত্মীয়স্বজন। প্রথম ট্রেনে না চড়লেও তিনি খুশি, আগামী সফরে গুয়াহাটি গিয়ে অপেক্ষার আর প্রয়োজন পড়বে না।

কিন্তু প্রণয় নাথ বা সঞ্জীবকুমার শর্মার মতো কত শতাংশ মানুষের আর দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে! স্টেশনে উপস্থিত রাখাল কর্মকার, আব্দুর রহমান, অঞ্জলি রায়চৌধুরীরা কখনও দিল্লি যাননি। কখনও যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না। তবু দেশের রাজধানীর সঙ্গে রেলে নিজের অঞ্চলের যুক্ত হওয়াটা কত গর্বের, টের পাওয়া গিযেছে তাঁদের চোখেমুখে। সম্পর্কক্রান্তি স্পেশাল স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পরও মানুষের উচ্ছ্বাস থামতে চায় না।

বিধানসভা ভোটের মুখে ওই আবেগ ছুঁয়ে প্রভু বলেন, ‘‘বাংলার নববর্ষ তো ১৪ এপ্রিল। এ যে দেখছি, নতুন বছরের আনন্দকেও ছাপিয়ে গেল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আসলে এর মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই। এই কাজগুলি বহু আগেই করা উচিত ছিল। হয়ে ওঠেনি। তাই আমি দায়িত্ব নিয়েই ভাবি, পুরনো কাজগুলি আগে শেষ করতে হবে। পূর্বের রাস্তা খুলতে হবে। কারণ সূর্যের আলো তো পূর্বদিক থেকেই আসে।’’

তিনি ঘোষণা করেন: ২০২০ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজধানী রেললাইনে যুক্ত হবে। ইম্ফল ও আইজল যুক্ত হবে তার অনেক আগেই। কোহিমা, শিলং, গ্যাংটকও ২০২০-র লক্ষ্যে রয়েছে। ত্রিপুরাতেও নতুন বছরের আগেই নববর্ষের উপহারের অঙ্গীকার করেন প্রভু। আশ্বস্ত করেন, ১৪ এপ্রিলের আগেই শিলচর-আগরতলা যাত্রিবাহী ট্রেন চালানো হবে।

অনেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে হোমওয়ার্ক না করেই এখানে এসে কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অসমিয়া-বাঙালি মানসিক দূরত্বের জায়গা ধরতে না পেরে শিলচরের সভায় ‘জয় অহম’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন। সুরেশ প্রভু সেখানে ব্যতিক্রম। কারও কিছু বলার
আগেই জানিয়ে দেন, শিলচর-গুয়াহাটি-শিলচর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের সম্ভাবনার জায়গা তাঁর বিভাগ খতিয়ে দেখছে। শিলচর-তিনসুকিয়া ট্রেনের কথাও এগিয়েছে অনেকটা। মুম্বই ও চেন্নাইয়ের সঙ্গে এই অঞ্চলকে রেলে সরাসরি সংযোগের ভাবনাও রয়েছে তাঁর। এগুলিকে মোটেও সাংঘাতিক কিছু করা বলে তিনি যে মনে করেন না, তাও বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেন। তিনি এগুলিকে ‘বেসিক নিডস’ বলেই উল্লেখ করেন।

শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব বাংলাদেশের সঙ্গে এই অঞ্চলের রেল যোগাযোগের দাবি তোলেন। পাহাড় এড়িয়ে বিকল্প রেললাইন নির্মাণেও গুরুত্ব দেন। শিলচর স্টেশনের নাম ভাষাশহিদ স্টেশন করার দাবির প্রতি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
করিমগঞ্জের এআইইউডিএফ সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস হাইলাকান্দি হয়ে মিজোরামের ভৈরবী পর্যন্ত গেজ পরিবর্তনের কাজ দ্রুত শেষ করার আর্জি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন