প্রতীকী চিত্র।
ব্রিটিশদের দেশছাড়া করতে বিলিতি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ বার পাকিস্তানের সঙ্গে নয়াদিল্লির রেষারেষিতে বেজিং ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়ানোয় চিনা পণ্য বয়কটের আওয়াজ উঠেছে। জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে কোনও ‘মেড ইন চায়না’ পণ্য না-কেনার বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। চিনে তৈরি জিনিসপত্রে কী ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, তা থেকে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়েও জোর প্রচার চলছে।
দীপাবলির আগে এই প্রচারে ব্যবসা মার খেতে পারে বলে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, দেশের স্বার্থে তাঁরা চিনা পণ্য বেচা বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু সরকারকে ব্যবসার ক্ষতি মিটিয়ে দিতে হবে। দীপাবলির আগে কেন্দ্রীয় সরকার চিনা আতসবাজির ব্যবহার রুখতে প্রচার শুরু করায় গুজব ছড়িয়েছে— মোদী সরকার তথা বিজেপিই আসলে চিনা পণ্য বন্ধ করতে চায়। বাস্তব কিন্তু উল্টো। নরেন্দ্র মোদী সরকার চিন থেকে পুরোপুরি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নয়। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য, ‘‘কোনও দেশের কিছু বিষয় অপছন্দ হলেই সেখান থেকে সব রকম আমদানি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যায় না।’’
বাস্তবেও তা সম্ভব নয় বলেই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য। কারণ দু’টি। এক, চিনের পণ্য বন্ধ করলে সস্তায়, একই রকম পণ্য এ দেশে তৈরি করতে হবে। দুই, ভারত চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়িয়ে চিন থেকে লগ্নি টানতে চাইছে। মোদী সরকার চাইছে, চিনের সংস্থাগুলি এ দেশে এসে কারখানা তৈরি করুক। চিনা পণ্যে পুরোপুরি বিধিনিষেধ চাপালে সেখানেও বাধা আসতে পারে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, চিন সস্তার পণ্য পাঠিয়ে বা ‘ডাম্পিং’ করে বাজার ছেয়ে ফেলছে— তা অজানা নয়। এমনকী বেনারসী-কাঞ্চিভরম শাড়িও নকল করে ফেলছে চিনের ব্যবসায়ীরা। চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশের নির্দিষ্ট কোনও শিল্প সমস্যায় পড়লে, ওই চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বসিয়ে আমদানিতে রাশ টানা যেতে পারে। আমেরিকার মতো দেশও চিন থেকে সস্তার ইস্পাত আমদানি রুখতে শুল্ক বসিয়েছে। পুরোপুরি আমদানি বন্ধ করেনি। কোনও পণ্যের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে ‘ডাম্পিং’ হচ্ছে বা তা নিম্ন মানের বলে প্রমাণ করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা কিন্তু আতঙ্কে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার, দিল্লির সদর বাজারের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, চিনা পণ্যের বিক্রি অন্তত ২০ শতাংশ কমেছে। এ দিকে তাঁরা আগামী তিন মাসের পণ্য মজুত করে ফেলেছেন। ব্যবসায়ীদের সংগঠন, কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স-এর মহাসচিব প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘আমরা চিনা পণ্য বয়কটের এই আবেগের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এর ফলে ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতি হবে। কারণ পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই পণ্য মজুত করে ফেলেছেন। সরকার সেই ক্ষতি পূরণ করে দিলে সমস্যা
নেই। এ বিষয়ে রণকৌশল ঠিক করতে আমরা সব রাজ্যের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের বৈঠক ডাকছি।’’
পাকিস্তানকে মদত দেওয়ার পাশাপাশি এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছে চিন। উরির হামলার পরেও বেজিং পাকিস্তানের নিন্দা করেনি। উল্টে রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারিতে ভারতের দাবিতে চিন আপত্তি তুলেছে। এর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চিনা পণ্য বয়কটের ডাক দিতে বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রকের সূত্র বলছে, মোবাইল থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মতো ক্ষেত্রে সত্যিই ‘মেড ইন চায়না’ পণ্যের বিকল্প নেই। মার্কিন বা বহুজাতিক সংস্থার পণ্যও তৈরি হচ্ছে চিনে।