কৃষকদের ‘গাঁও বন্ধ’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেই পঞ্জাব, হরিয়ানার বিভিন্ন শহরে লাফিয়ে দাম বাড়তে শুরু করেছে কৃষিপণ্যের। কৃষক সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি, এ তো শুরু। গাঁও বন্ধের ফল টের পাওয়া যাবে আর ক’দিনের মধ্যেই। বামেদের ‘অল ইন্ডিয়া কিসান সভা’ আজ বৈঠকে বসে, ৫ জুন থেকে এই আন্দোলনকে আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সব ঋণ মকুব, উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, আয়ের নিশ্চয়তা, বিনামূল্যে বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন দাবিতে গত কাল থেকে এই আন্দোলন শুরু করেছে ১৭২টি কৃষক সংগঠন। ২২ রাজ্যে ১০ দিনের এই কর্মসূচির শেষে ভারত বন্ধও ডেকেছে তারা। উত্তর ও মধ্য ভারতের চাষিদের একটা বড় অংশ গত কাল থেকে তাঁদের পণ্য শহরের পাইকারি বাজারে পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। আনাজ, ফল ও দুধ রাস্তায় এনে জড়ো করা হচ্ছে। বাকিটা বিক্রি করছেন গ্রামবাসীদের মধ্যে।
গত বছর ৬ জুন মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে পুলিশের গুলিতে ১১ জন চাষির মৃত্যু হয়েছিল। তার বর্ষপূর্তির দিনে সেখানে থাকবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। আজ তিনি টুইট করেছেন, ‘‘দেশে রোজ ৩৫ জন চাষি আত্মহত্যা করেন। অন্নদাতাদের এই লড়াইয়ে ওঁদের পাশে থেকে কিসান সমাবেশ সার্থক করব।’’
বিজেপি এবং কেন্দ্রে ও রাজ্যে তাদের সরকার এই কৃষক আন্দোলনকে আমল দিতে নারাজ। সেই কথা বোঝাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘খবরে আসার জন্য কৃষকরা আত্মহত্যা করেন!’’ তাঁর এই মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছে তাঁর দলকেই। এটাই অবশ্য প্রথম নয়। এর আগে আত্মহত্যার দাওয়াই হিসেবে চাষিদের যোগাসন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বিহারের মোতিহারিতে রামদেবকে এনে যোগশিবিরও করেন। রাধামোহনের দাবি, ‘‘মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের জন্য বিস্তর উন্নয়ন কর্মসূচি চলছে। দেশের কোটি কোটি চাষির মধ্যে হাতেগোনা ক’জন এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।’’ একই সুর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের। বলেছেন, ‘‘কৃষকদের কোনও সমস্যাই নেই। অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম করছেন ওঁরা।’’
উল্টো ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। নাগপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘‘এই অবস্থার জন্য দায়ী অতিরিক্ত ফলন আর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। আগেও এমন ঘটেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। কিছু দীর্ঘকালীন নীতি আনার কথা ভাবা হচ্ছে। দাম ধরে রাখতে বিদেশে আনাজ রফতানির কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে।’’