‘হান্টার’ আক্রান্ত শৌর্য, দূর অস্ত্ দিল্লি ও চিকিৎসা

স্কুলগাড়ি তাদের বাড়ির দরজার সামনে রোজ আসে। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার মতো সুস্থ সে প্রতিদিন থাকে না! ‘হান্টার সিন্ড্রোম’ নামে জিনঘটিত এক বিরল অসুখে ভুগছে রাঁচীর পান্ড্রার ছোট্ট শৌর্য।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৩:১০
Share:

বাবার কোলে শৌর্য। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুলগাড়ি তাদের বাড়ির দরজার সামনে রোজ আসে। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার মতো সুস্থ সে প্রতিদিন থাকে না!

Advertisement

‘হান্টার সিন্ড্রোম’ নামে জিনঘটিত এক বিরল অসুখে ভুগছে রাঁচীর পান্ড্রার ছোট্ট শৌর্য। ছেলেদের মধ্যেই মূলত এই রোগ দেখা দেয়। মিউকোপলিস্যাকারাইডস নামক এক ধরনের এনজাইমকে ভাঙা ও রিসাইকেল করার ক্ষমতা শরীর ক্রমশ হারায়। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসম্ভব ব্যথা। আর সেই ব্যথা না কমলে ঘুম আসে না শৌর্যর। সকালে স্কুলে যাবে কী করে!

ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা মা নেমেছেন এক ‘অসম’ লড়াইয়ে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি— সর্বত্র চিঠি লিখেছেন। চিঠি লিখেছেন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, সবাইকে। এখনও পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেননি আশার আলো। চোখের সামনে ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে তাঁদের সন্তান।

Advertisement

একটি মোবাইল সংস্থার অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজারের পদে কর্মরত শৌর্যর বাবা সৌরভ সিংহ জানান, আড়াই বছর বয়সে সন্তানের এই রোগ ধরা পড়ে। বদলে যায় তাঁদের জীবনটাই। তিনি বলেন, ‘‘হান্টার সিন্ড্রোম নামে এই অসুখে বয়স যত বাড়তে থাকে ততই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কাজ বন্ধ করে দেয়। এর ওষুধ দেশে মেলে না। আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার দু’টি সংস্থা এই রোগের ওষুধ তৈরি করে।’’

এই রোগ সম্পর্কে পিএমও এইমসের কাছে জানতে চায়। এইমস জানায়, এই রোগে আক্রান্তকে বাঁচাতে প্রতি সপ্তাহে দু’টি করে বছরে মোট ১০৪টি ইঞ্জেকশন দিতে হয়। যার বার্ষিক কোর্সের দাম ভারতীয় টাকায় ১.৭৫ কোটি টাকা। সৌরভবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই হিসেব শুনে সম্ভবত পিএমও-ও ঘাবড়ে গিয়েছে। তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে শৌর্যর জন্য। আর কোনও জায়গা থেকেই কোনও সাড়া নেই।’’ তাঁদের সব কিছু বিক্রি করে দিলেও তো এই খরচের মোকাবিলা করতে পারবেন না, আক্ষেপ সৌরভবাবুর।

‘‘কিন্তু তা বলে বিনা চিকিৎসায় ছেলেকে শেষ হয়ে যেতে দেখব আমরা?’’ শৌর্যর মা রিচাদেবীর এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাকে। তাঁর কাছে যথাযথ উত্তর নেই। সরকারি খরচে এই ধরনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া যে সম্ভব নয় তা স্বীকার করেন তিনি। তিনি জানান, দেশে এই ধরনের বিরল রোগগুলির ওষুধ তৈরির চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি ওষুধ সংস্থাগুলির সঙ্গেও সরকার আলোচনা করছে। তবে আশু সমাধান যে সরকারের হাতে নেই তা স্বীকার করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার পরেও শৌর্যর মায়ের প্রশ্নগুলি রয়েই যাচ্ছে, ‘‘এ রকম বিরল অসুখে ভোগা বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কেন থাকবে না? এরা কি তা হলে তিল তিল করে এগিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে?’’

রিচাদেবী ও সৌরভবাবুকে এর কোনও উত্তর এখনও পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। চোখের সামনে তাঁরা ফুটফুটে ছেলেটার শারীরিক অবস্থার ক্রম-অবনতি দেখছেন। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘হাতে সময় ক্রমশ কমে আসছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement