Bihar Assembly Election 2025

অঙ্ক কষা চলছিল শুধু পিকে-র ভোট-বিয়োগ নিয়ে, ভোট-যোগ করে অঙ্ক বদলে দিলেন বিহার এনডিএ-র সেজো শরিক চিরাগ

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগের দল লোক জনশক্তি পার্টি-রামবিলাস (এলজেপি-আর) এনডিএ শরিক হিসাবে লড়েনি। বিজেপির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তখনও ছিল। কিন্তু বাবা রামবিলাস পাসওয়ানের সঙ্গে নীতীশ কুমারের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্কের জের থেকে চিরাগ তখনও মুক্ত হতে পারেননি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:০৩
Share:

চিরাগদের ভোট এনডিএ-র খাতায় যোগ হলে ভোটচিত্র যে বদলাবে, সে হিসাব অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে মাথায় রাখেননি। ছবি: পিটিআই।

বিবিধ ‘ভোট-পণ্ডিত’ ব্যস্ত ছিলেন বিয়োগের অঙ্ক কষতে। পিকে-র (প্রশান্ত কিশোর) জন সুরাজ পার্টি কত ভোট কাটবে আর কার ভোটে ভাগ বসাবে, তার উপরে নাকি অনেকখানি নির্ভর করবে বিহারের ভোটভাগ্য। এমন ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ বিহারের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাতেও ডানা মেলেছিল। কিন্তু পিকে যেমন কারও খাতা থেকে ভোট বিয়োগ করতে পারেন, তেমন চিরাগ পাসওয়ান যে কোনও একটি খাতায় ভোট যোগ করতে চলেছেন, সে অঙ্ক অনেকেই কষেননি। সম্ভবত গুরুত্বও দেননি। ফলাফল বলছে, বিহার রাজনীতির তরুণ মহারথী চিরাগ ওলট-পালট করে দিয়েছেন অনেক ‘পণ্ডিতে’র হিসাব।

Advertisement

পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগের দল লোক জনশক্তি পার্টি-রামবিলাস (এলজেপি-আর) এনডিএ শরিক হিসাবে লড়েনি। বিজেপির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তখনও ছিল। কিন্তু বাবা রামবিলাস পাসওয়ানের সঙ্গে নীতীশ কুমারের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্কের জের থেকে চিরাগ তখনও মুক্ত হতে পারেননি। তাই নীতীশের দল জেডিইউয়ের সঙ্গে জোটে যেতে চাননি। বিহারের ১৪৩টি বিধানসভা আসনে তিনি প্রার্থী দিয়ে দেন। বিজেপি যে সব আসনে লড়ছিল, সেগুলি বাদ দিয়ে বেছে বেছে জেডিইউয়ের ভাগের আসনগুলিতে। তাতে চিরাগ নিজের দলের খাতা উজ্জ্বল করতে পারেননি। একটি মাত্র আসন জিতেছিল এলজেপি-আর। কিন্তু ভোট কেটে নীতীশের প্রার্থীদের দিকে দিকে ধরাশায়ী করে দিয়েছিলেন তিনি। জেডিইউ-এর আসনসংখ্যা ৭১ থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন ৪৩-এ।

পরে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এনডিএ শরিক হিসাবেই লড়েন প্রয়াত রামবিলাসের পুত্র। পাঁচটি লোকসভা আসনে লড়ে সবক’টিতেই জেতে তাঁর দল। তৃতীয় মোদী সরকারে চিরাগ মন্ত্রীও হন। কিন্তু মাস ছয়েকের মধ্যেই বিহারের রাজনীতিতে ফের নীতীশের সরকারের সমালোচনায় সরব হতে শুরু করেন। ফলে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ কতটা জোটবদ্ধ হয়ে লড়বে, তা নিয়ে নানা মহলে সংশয় ছিল। আসন ভাগাভাগি পর্বে সে সংশয় আরও বেড়েছিল। কারণ, বিহারে অন্তত ৪০টি আসন এলজেপি-আর লড়বে বলে চিরাগ এক সময়ে জেদ ধরে বসেছিলেন। পরে অমিত শাহের মধ্যস্থতায় চিরাগ ২৯টি আসন নিয়েই জোটে থাকতে রাজি হয়ে যান।

Advertisement

সংশয় তার পরেও ছিল। কারণ, বিহারের জাতপাতের সমীকরণে ব্যক্তি নীতীশ সম্পর্কে তিক্ততা রয়েছে চিরাগের দলের অনুগামী পাসি সমাজের মধ্যে। ২০০৭ সালে তফসিলি সমাজের মধ্যে থেকে ‘মহাদলিত’ সমাজকে আলাদা করে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। ‘মহাদলিত’ হিসাবে পরিচিত ২২টি সম্প্রদায়ের মধ্যে ২১টিকেই সে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করলেও পাসি সমাজকে রাখেননি। সঙ্ঘাত তখন থেকেই। তাই এ বারের ভোটেও শেষ পর্যন্ত নীতীশ-চিরাগ একত্রে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল। খাতায়-কলমে জোট হলেও মাটিতে তা দানা বাঁধবে কি না, তা নিয়েও নানা রকমের চর্চা ছিল। সে সব সংশয় কাটাতে ছটপুজোর দিন নীতীশ হাজির হন চিরাগের বাড়িতে। দীর্ঘক্ষণ তাঁর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। চেষ্টা ছিল, নীচের স্তরে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে মনান্তর যাতে কমে।

জোট যে তৃণমূল স্তর পর্যন্তই দানা বেঁধেছিল, তা ফলাফলে স্পষ্ট। শরিক দল ভোট না কাটায় নীতীশের দল ৪৩ থেকে বেড়ে ৮৪তে পৌঁছে গিয়েছে। আর চিরাগের দল একটি আসন থেকে বেড়ে গণনার শেষ পর্বে এসে ১৯ থেকে ২২ আসনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিহারে এ বারের নির্বাচনে এত ভাল ‘স্ট্রাইক রেট’ বিজেপি ছাড়া শুধু চিরাগেরই। বিজেপি ১০১টি আসনে লড়ে ৯০-এর ঘরে পৌঁছেছে। এলজেপি-আর ২৯টিতে লড়ে ২০-র আশেপাশে।

চিরাগদের ভোট এনডিএ-র খাতায় যোগ হলে ভোটচিত্র যে বদলাবে, সে হিসাব অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে মাথায় রাখেননি। পিকে-র কর্মসূচির জাঁকজমক, পিকে-র তৈরি করা ভাষ্য, পিকে-র ‘পরিশ্রম’ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা চলছিল বেশি। কেউ আশা করছিলেন, পিকে-র ফলাফল চমকে দেবে। কেউ দাবি করছিলেন, পিকে-র দল বেশি আসন পাক বা না পাক, ভোট টানবে। আর সে ভোট যাঁর খাতা থেকে বিয়োগ হবে, তিনি ধরাশায়ী হবেন। পিকে শেষ পর্যন্ত কার ভোট কেটেছেন, কাটলেও কতটুকু, সে হিসাব এখন অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু পিকে-র ‘ভোট-বিয়োগ’ নিয়ে ভাবতে গিয়ে চিরাগের ‘ভোট-যোগ’কে হিসাবে রাখতে যে অনেকে ভুলে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement