মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখলের দৌড়ে থাকা দলীয় নেতাদের প্রত্যাশার বেলুনে ছুঁচ ফুটিয়ে গেলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতিতে আজ ঝাড়খণ্ডে দলীয় কর্মিসভায় তিনি বললেন, “আগে রাজ্যের ২৫ হাজার বুথে জিতে আসুন। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিধানসভায় পৌঁছন। তার পর মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করা হবে।” তাঁর ইঙ্গিত, রাজ্যে আসন্ন ভোটের ময়দানে বিজেপির মুখ থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।
রাজ্য সফরে আসা সভাপতিকে তুষ্ট করতে তৎপর ছিলেন প্রদেশ বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। গত রাতে রাঁচি পৌঁছনোর পর থেকেই অমিতের ছায়াসঙ্গী হন অর্জুন মুন্ডা, রঘুবর দাস, সুদর্শন ভগতরা। কিন্তু সভাপতির বক্তৃতার পর তাঁদের কারও কারও মুখ ছিল অনেকটাই ম্রিয়মাণ।
কর্মিসভায় অমিতের ঝাড়খণ্ড সফরকে ‘বসন্তের আগমন বার্তা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন অর্জুন। আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রঘুবর বলেন, “আমাকে দলে ওই জায়গা দিয়েছেন আপনিই (অমিত)।”
বিজেপি সভাপতি অবশ্য বুঝিয়ে দেন, কথায় নয়, কাজেই তিনি বেশি বিশ্বাসী। অনেকটা মোদীর মতোই। মধুর-মন্তব্যে যে তাঁর মন ভেজেনি, তাও অমিতের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়। বিজেপি শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “ঝাড়খণ্ডে জিতলে দলের কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সবাই তা জানতে চাইছেন। কোনও এক জন বিধায়ককে নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই। ৮০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আগে ৭০টি দখল করতে হবে। তার পর এ সব নিয়ে ভাবার সময়।”
লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ডের ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টি জিতেছে বিজেপি। কিন্তু, সে দিকে তাকাতে নারাজ অমিত। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখলেই তিনি বেশি আগ্রহী। প্রদেশ বিজেপির অন্দরমহলে গোষ্ঠী-কোন্দলের চোরাস্রোত বইছে। এক দিকে অর্জুন শিবির, অন্য দিকে রঘুবর বা সুদর্শনের। মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে ওই আঁচে হাওয়া দিতে চাননি অমিত। বিধানসভা ভোটে দলের সব স্তরের নেতাদের কাছ থেকে ১০০ শতাংশ কাজ আদায় করতে চাইছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সব চেয়ে ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রীর গদি ‘ইনাম’ দিতে চান মোদী, অমিতরা।
বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসতেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ভাসাতে ব্যস্ত হয়েছে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের নিজস্ব শিবিরগুলি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা অর্জুন মুন্ডার তরফে ফেসবুকে প্রচারও শুরু হয়েছিল আবকি বার অর্জুন মুন্ডা কি সরকার। সে খবর পৌঁছয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কানে। তার পরই রাজ্য রাজনীতিতে মুন্ডার বিরোধী শিবিরের লোক বলে পরিচিত প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসকে দলের সহ-সভাপতি করা হয়। রঘুবরও মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে আছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি। কয়েক দিন আগে রাঁচিতে লোহারডাগার সাংসদ সুদর্শন ভগতকে ‘মাটি কা লাল’ বলেছিলেন মোদী। আরএসএস-এর সক্রিয় কর্মী সুদর্শনকে এ দিন একই ভাষায় সম্বোধন করেন অমিত। এতে উৎসাহিত সুদর্শনের অনুগামীরা।