কোহলি এবং আরসিবি তারকাদের দেখতে বিপুল জনসমাগম হয় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। — ফাইল চিত্র।
বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি), কর্নাটকের স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসসিএ) বিরুদ্ধে আগেই মামলা রুজু হয়েছে। এ বার পদপিষ্টকাণ্ডে বিরাটের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন এক সমাজকর্মী। পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার অনুরোধ জানান তিনি। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, তদন্তের সময় তাঁর অভিযোগপত্র দেখা হবে। তবে নতুন করে কোনও এফআইআর দায়ের বা এফআইআরে কোহলির নাম পুলিশ যুক্ত করেনি বলে খবর। ঘটনার প্রায় দু’দিন পরে শুক্রবার সকালে আরসিবির বিপণন বিভাগের প্রধানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিজয়োৎসব আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সংস্থার তিন আধিকারিককেও আটক করা হয়েছে।
১৭ বছরের অপেক্ষার পর মঙ্গলবার প্রথম বার আইপিএল ট্রফি জিতেছে আরসিবি। সেই উপলক্ষে বুধবার বেঙ্গালুরুতে বিজয়োৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। কোহলি এবং আরসিবি তারকাদের দেখতে বিপুল জনসমাগম হয় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০।
এই ঘটনায় আরসিবি এবং কেএসসিএ-র বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে কর্নাটক হাই কোর্ট। গ্রেফতারির আশঙ্কা করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কর্নাটক ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। সেই মামলায় শুক্রবার বিচারপতি এসআর কৃষ্ণ কুমার নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। তবে যে সব আধিকারিকের নাম এই মামলায় জড়িয়েছে, তাঁদের আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন বিচারপতি। সিদ্দারামাইয়া সরকার মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কর্নাটকের গোয়েন্দাপ্রধানকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিবকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
কোহলির বিরুদ্ধে থানায়
পদপিষ্টকাণ্ডের দু’দিন পরে, শুক্রবার ক্রিকেটার বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন এক সমাজকর্মী। বেঙ্গালুরুর কুব্বন পার্ক থানার পুলিশকে কোহলির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জি জানিয়েছেন এইচএম ভেঙ্কটেশন নামে ওই সমাজকর্মী। সূত্রের খবর, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ইতিমধ্যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তবে তিনি যে চিঠি থানায় জমা করেছেন, তা তদন্তের সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী কর্নাটকের শিবমোগ্গার বাসিন্দা। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই জায়গাটি কুব্বন পার্ক থানার অন্তর্গত। সে কারণে সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন ভেঙ্কটেশন।
আরসিবি কর্তা গ্রেফতার
শুক্রবার গ্রেফতার হন আরসিবির বিপণন (মার্কেটিং) বিভাগের প্রধান নিখিল সোসালে। বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই যাওয়ার পথেই গ্রেফতার হন তিনি। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। গত ৪ জুন আরসিবির বিজয়োৎসব আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ‘ডিএনএ এন্টারটেনমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের’ তিন জন আধিকারিককেও আটক করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর কুব্বন পার্ক থানায় ওই ইভেন্ট সংস্থার তিন জন আধিকারিক কিরণ, সুমন্ত এবং সুনীল ম্যাথিউকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। এফআইআর দায়ের প্রসঙ্গে আরসিবি কর্তৃপক্ষ জানান, সরকার এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে তাঁরা সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
হাই কোর্টের নির্দেশ
কর্নাটক হাই কোর্ট শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্টের ঘটনায় কর্নাটক ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে এখনই কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। আরসিবি ছাড়াও কর্নাটকের স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসসিএ) বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে। বেঙ্গালুরুর কুব্বন পার্ক থানার পুলিশ এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে। গ্রেফতারির আশঙ্কা করেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কর্নাটক ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। সেই মামলায় শুক্রবার বিচারপতি এসআর কৃষ্ণ কুমার নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। কর্নাটক ক্রিকেট বোর্ডের যে সব আধিকারিক এই মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন, তাঁদেরও আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন বিচারপতি। তাঁর আরও নির্দেশ, বোর্ডের আধিকারিকদের তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে।
বদলি, বরখাস্ত
কর্নাটকের গোয়েন্দাপ্রধান হেমন্ত নিম্বলকরের বদলির নির্দেশ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার অফিস। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের পদপিষ্টের ঘটনার জেরেই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু হেমন্ত নন, সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিব কে গোবিন্দরাজকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। একই দিনে পুলিশ এবং প্রশাসনের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল সিদ্দারামাইয়া সরকার। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে বিপর্যয়ের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুনছে কর্নাটক হাই কোর্ট। রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। সেখানেই কর্নাটক সরকার জানায়, এই ঘটনার তদন্ত করবে সিআইডি। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হচ্ছে।
সরকারের দিকে আঙুল
পদপিষ্টের ঘটনার পরে দায় অস্বীকার করেছে কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অনুষ্ঠান আয়োজনে তাদের কোনও হাত ছিল না। পুরো দায়ই সরকারের। তারাই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতামতেই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি, ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে কোনও ভাবেই দায়ী করা উচিত নয়। অন্য দিকে, বেঙ্গালুরুর নিরাপত্তাব্যবস্থা যে ভাল নয় তা এক বছর আগেই একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন চেন্নাই সমর্থকেরা। সেই পোস্ট এখন সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। চেন্নাই সমর্থকদের গ্রুপ ‘হুইসল পোড়ু আর্মি’ আবার একটি পোস্ট দিয়ে লেখে, “এক বছর আগেই আমরা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। তখন সমস্যার সমাধান না করে আমাদের দিকেই কটাক্ষ ভেসে এসেছিল। দুর্ভাগ্যবশত, এ বার যা হল তা সামান্য দায়বদ্ধতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইচ্ছা থাকলেই এড়ানো যেত।”
বিলাপ মৃতদের পরিবারের
কোহলিরা আসছেন শহরে। জানতে পেরেই ১৪ বছরের দিব্যাংশী মায়ের কাছে আবদার করেছিল, স্কুলে যাবে না সে। বরং কোহলি এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) অনুষ্ঠান দেখতে যেতে চায় সে। কোহলির বড় ভক্ত দিব্যাংশী। কন্যার আবদার শুনে মা রাজি হয়ে যান। আর তাতেই বিপত্তি। পদপিষ্ট হয়ে বুধবার স্টেডিয়ামের বাইরে মৃত্যু হয় কিশোরীর। মেয়েকে হারানোর শোকে কাতর মা। অফিসে বসের কাছে কয়েক ঘণ্টার ছুটি চেয়েছিলেন কামাক্ষী। আরসিবির অনুষ্ঠান দেখেই আবার ফিরে আসবেন অফিসে। বসের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েই ছুটেছিলেন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উদ্দেশে। কিন্তু কে ভেবেছিলেন, হাসিমুখে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটির নিথর দেহ ফিরবে! বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কামাক্ষী দেবীর। বুধবারের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দিব্যাংশী, কামাক্ষীও।