Opposition Alliance

সব বিরোধীই পাশে, তবু জোট নিয়ে জট অব্যাহত

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের নির্দেশ যে দিন দেওয়া হয়, ঘটনাচক্রে সে দিনই ইডি এবং সিবিআইয়ের ‘অতিসক্রিয়তার’ বিরুদ্ধে ১৪টি বিরোধী দল একত্রে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৩
Share:

রাহুল গান্ধী। ফাইল ছবি।

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিষয়টি নিয়ে সব ক’টি বিরোধী দল এক সুরে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিষয়টি আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে সামগ্রিক বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো বলে অনেকে মনে করলেও তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। বিরোধী শিবিরের একাংশের বক্তব্য, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য তৈরি করতে গেলে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে তাদের নিজের নিজের এলাকায় লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে দিতে হবে কংগ্রেসকেই।

Advertisement

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের নির্দেশ যে দিন দেওয়া হয়, ঘটনাচক্রে সে দিনই ইডি এবং সিবিআইয়ের ‘অতিসক্রিয়তার’ বিরুদ্ধে ১৪টি বিরোধী দল একত্রে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে তৈরি হওয়া এই দু’টি ঘটনা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। বিরোধীদের বক্তব্য থেকে ক্রমশ স্পষ্ট, রাহুল গান্ধীকে রাতারাতি জোটের নেতা বানিয়ে নিজের রাজ্যে বিরোধী পরিসর ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা আঞ্চলিক দলগুলির নেই। বরং রাহুলের সদস্যপদ বাতিলের ঘটনাকে কংগ্রেস রাজনৈতিক ভাবে চড়া সুরে ব্যবহার করতে চাইলেও এ নিয়ে সতর্কই থাকতে চাইছে তৃণমূল বা এসপি-র মতো দলগুলি। শরদ পওয়ারের এনসিপি-ও ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছে, ২০২৪-এর ভোটে বিজেপির মোকাবিলা করতে হলে যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে লড়াইয়ের পরিসর দিতে হবে। শনিবার রাতে কংগ্রেসের অস্বস্তি

বাড়িয়ে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও একই সুরে বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, আঞ্চলিক দলগুলি যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে নেতৃত্বে থাকবে। এমন অনেক আসন আছে, যেখানে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই এবং সেখানে কংগ্রেসই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে।’’

Advertisement

আজ সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়, যে সব রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের থেকে দূরে থাকত, তারাও সদস্যপদ খারিজের পরে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাঁর কি মনে হয় যে, সমস্ত বিরোধীর একজোট হওয়ার সময় এসে গিয়েছে? উত্তরে বিশদে বলতে শোনা যায়নি রাহুলকে। শুধু এটকু বলেই সেরেছেন, “যে সব বিরোধী দল এই ব্যাপারে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন, আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।”

অন্য দিকে তাঁর বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, “বিজেপি চাইছে দেশ থেকে গণতন্ত্র এবং বিরোধিতা শেষ করে দিতে। সে কারণেই বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করার জন্য আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং তাঁর বোন মিশা ভারতীকেও কেন্দ্রীয় সংস্থা সমানে উত্যক্ত করছে। গণতন্ত্রের উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা একজোট।”

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, রাহুল যে ‘এক সঙ্গে কাজ’ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে আপাতত সর্বাগ্রে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই এবং ইডি-র সঙ্গে লড়াইয়ের প্রসঙ্গটি। তৃণমূল মনে করিয়ে দিচ্ছে, যার উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে এই মামলাটি হচ্ছে, সেই অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি একাধারে কংগ্রেস এবং তৃণমূল এই দু’দলেরই ভোটে রাজ্যসভায় জিতে এসেছিলেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এই জোট রাজনৈতিক নয়, আইনি মঞ্চে আসার জোট।’’ তৃণমূলের দাবি, প্রথম যে ৮টি দল বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল, তার মধ্যে কংগ্রেস এবং তার শরিক দলগুলি ছিল না। পরে একে একে এসেছে। তবে এটাও তৃণমূল মনে করে, বিরোধী দলগুলির মধ্যে (বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে) মতপার্থক্য থাকলেও একটা সুযোগ এসেছে, এক সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। রাহুলের সদস্যপদ খারিজের পরে যে বিরোধী ঐক্যের ছবি দেখা যাচ্ছে, তাকে জোটের চূড়ান্ত চেহারা বলে মনে করছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, আগামী সোমবার সকালে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে তাঁর ঘরে বিরোধী দলনেতাদের বৈঠক ডাকতে চলেছেন। সেখানে তৃণমূলের যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, “আমরা মনে করি, বিরোধীদের মূল লড়াইটা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। আর এটাও খেয়াল রাখতে হবে, এই হইচইয়ে আদানির ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়টি যেন আলোচনা এবং প্রচারের শিরোনাম থেকে মুছে না যায়।”

সম্প্রতি কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অখিলেশ যাদব। গত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন তিনি। এসপি-র ঘোষিত নীতি, বিরোধী নেতৃত্বের রাশ মমতার হাতে থাক। আজ অখিলেশের বক্তব্য, ‘‘আঞ্চলিক দলগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন কংগ্রেসের। তা হলেই বিজেপির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।” ওবিসি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পাল্টা তাস বিজেপির দিকে ছুড়ে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি নেতারা পিছিয়ে পড়া জাতিকে সর্বদা অপমান করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে কোনও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির লোক ঢুকলে বিজেপি কর্মীরা দফতরের সামনে গঙ্গাজল দিয়ে সাফ করেন। এটা অপমান নয়?” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, অখিলেশের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি নিজে ওবিসি সমাজের প্রতিনিধি। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার আবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজকে ‘অসাংবিধানিক’ বললেও তাঁর দল মনে করে, যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তাকে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য খোলা ময়দান ছেড়ে দেওয়া হোক। নীতীশ কুমারের দলের সাংসদ রাজীব রঞ্জন বলেন, “রাহুলের বিরুদ্ধে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যে ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা প্রমাণ করে যে, কেন্দ্রীয় সরকার মরিয়া। তারা হতাশাগ্রস্তও বটে। গণতন্ত্রে সব কিছুর রীতি-নিয়ম রয়েছে। এখানে তা মানা হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন