GST Rate Cuts on Beedi

বিড়িতে কেন জিএসটি কমানো হল? উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যবিদেরা, কর নির্ধারণে হু-র সুপারিশ এবং নির্মলার সিদ্ধান্তে কতটা ফারাক

তামাকজাত সব পণ্যে শুল্ক বাড়লেও ব্যতিক্রম কেবল বিড়ি। বিড়ির দাম বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে। জিএসটি ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৮ শতাংশ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫১
Share:

বিড়ির উপর জিএসটি আগের চেয়ে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সিগারেট-সহ যাবতীয় তামাকজাত পণ্যের উপর জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে কেবল একটি ক্ষেত্রে। বি়ড়িতে জিএসটি বাড়েনি। বরং কমে গিয়েছে বেশ খানিকটা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জিএসটি কাঠামো কার্যকর হলে বি়ড়ির দাম আগের চেয়ে কমবে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এতেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা উদ্বিগ্ন।

Advertisement

এত দিন বিড়ির উপর ২৮ শতাংশ জিএসটি নির্ধারিত ছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যে নতুন কর কাঠামো ঘোষণা করেছেন, তাতে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। বিড়ির উপর জিএসটি ২৮ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৮ শতাংশ। তবে সিগারেট ও অন্য তামাকজাত পণ্য ২৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের সর্বোচ্চ শুল্কের স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিড়ি এবং সিগারেট সমান ক্ষতিকর। দাম কমে যাওয়ায় এ বার বিড়ির বিক্রি হু হু করে বাড়বে। পাশাপাশি আশঙ্কা, যাঁরা সিগারেট খেতেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরাও এখন সস্তার বিড়ির দিকে ঝুঁকতে পারেন। বিশেষত, দেশের গরিব মানুষদের মধ্যে বিড়ি এ বার আরও জনপ্রিয় আরও বহুল ব্যবহৃত হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সমর্থন করতে পারছেন না।

শুল্ক বৃদ্ধি করলে যে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে, তা প্রমাণিত সত্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র একটি সমীক্ষা বলছে, দাম যদি ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে বিড়ি-সিগারেট সেবন ৪ থেকে ৮ শতাংশ কমে। এ ক্ষেত্রে হু-র সুপারিশ, সকল তামাকজাত পণ্যের উপর অন্তত ৭৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা দরকার। তবেই তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এই সুপারিশের সঙ্গে নতুন জিএসটি কাঠামোয় ভারতের ফারাক ৫৭ শতাংশ। তামাকজাত রোগব্যাধি থেকে প্রতি বছর ভারতে ১.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হয়, দাবি সমীক্ষায়। চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস এই হিসাবে ধরা রয়েছে।

Advertisement

গ্লোবাল অ্যাডল্ট টোব্যাকো সার্ভে (জিএটিএস)—র ২০১৬-১৭ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বিড়ি খান প্রায় সাত কোটি মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বিশাল রাও বলেন, ‘‘আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ প্রধানত বিড়ি খান। এটা খুবই ক্ষতিকর। এই কর বৈষম্যের কারণে বিড়ির দাম আরও কমবে, বিক্রি বাড়বে। ক্যানসার এবং অন্য রোগের ঝুঁকি এতে বাড়বে। এই সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপরে চড়া শুল্ক আরোপ করা উচিত।’’ দিল্লি এমসের রিউমাটোলজি বিভাগের প্রধান উমা কুমারের কথায়, ‘‘বিড়ি ক্ষতিকর হিসাবে সিগারেটের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বিড়ির জন্য ক্যানসার, বিভিন্ন ফুসফুসের রোগ এবং হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে।’’

দিল্লি স্টেট ক্যানসার ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ প্রজ্ঞা শুল্ক জানিয়েছেন, বি়ড়িতে টার, নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড উচ্চমাত্রায় থাকে। এতে মুখে এবং ফুসফুসে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া মূত্রাশয়ে এবং জরায়ুতেও ক্যানসার হতে পারে বিড়ি থেকে। শ্বাসযন্ত্রের অন্য নানারকম রোগের মূলেও থাকতে পারে বিড়ি। প্রজ্ঞার মতে, বিড়ি-সিগারেটে সমান ভাবে চড়া শুল্ক আরোপ করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর থেকে অর্থনৈতিক বোঝা অনেকটা কমে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement