Rahul Gandhi

রাহুল: বিজেপির দেশপ্রেম-কৌশলে চাপে কংগ্রেস

কংগ্রেস নেতারা প্রথমে বলছিলেন, সংসদে আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে মোদী সরকার রাহুলের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কথা বলার অভিযোগ তুলে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৫
Share:

রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।

রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে দেশের ও সংসদের অপমান করেছেন বলে অভিযোগ তুলে বিজেপি কর্নাটকের ভোটের প্রচারে ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘দেশপ্রেম’-এর আবেগ উস্কে দিতে চাইছে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের এই কৌশলে কর্নাটকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে বলে কংগ্রেস প্রমাদ গুনছে। রাহুল গান্ধীকে ‘দেশবিরোধী’ তকমা দিতে বিজেপি নেতাদের লাগাতার আক্রমণের মুখে কংগ্রেস এখন ‘কিছুটা পিছু হটছে’। ‘রাহুল কোনও দেশবিরোধী মন্তব্য করেননি’ বলে দলের নেতারা এ বার ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন।

Advertisement

কংগ্রেস নেতারা প্রথমে বলছিলেন, সংসদে আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে মোদী সরকার রাহুলের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কথা বলার অভিযোগ তুলে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করছে। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্নাটকে গিয়ে রাহুলকে নিশানা করেন। অভিযোগ তোলেন, রাহুল লন্ডনে গিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের অপমান করেছেন। তার পর জে পি নড্ডা থেকে স্মৃতি ইরানি, একের পর এক বিজেপি নেতানেত্রী কর্নাটকে ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ তুলেছেন। কংগ্রেসকে তার জবাব দিতে হচ্ছে। ফলে কর্নাটকের স্থানীয় সমস্যা পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে।

এপ্রিল-মে মাসেই কর্নাটক নির্বাচন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়াতে কর্নাটককেই পাখির চোখ করছে কংগ্রেস। দাক্ষিণাত্যে বিজেপির সবেধন নীলমণি কর্নাটকে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপিও মরিয়া। বিজেপি নেতৃত্বের ধারণা, কর্নাটকে জিতলে বছরের শেষে দক্ষিণের আর এক রাজ্য তেলঙ্গানার ভোটেও নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়বে। কর্নাটকের কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এত দিন তাঁরা কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পা ও বোম্মাই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ তুলে বিজেপিকে কোণঠাসা করছিলেন। তার জবাব দিতে না পেরে বিজেপি এখন কর্নাটকের প্রচারে বলছে, মোদী ভারতকে বিশ্বের প্রথম সারিতে তুলে আনার চেষ্টা করছেন, ভারত জি-২০-র সভাপতিত্ব করছে। ভারতের কোভিড টিকায় গোটা বিশ্ব উপকৃত হয়েছে, অথচ রাহুল বিদেশে গিয়ে দেশের নিন্দা করছেন।

Advertisement

নড্ডা শুক্রবার চিত্রদুর্গায় ‘রোড শো’ থেকে রাহুলকে নিশানা করেছেন। তার আগে স্মৃতি হুবলিতে রাহুলকে নিশানা করেছেন। দু’জনেই অভিযোগ করেছেন, মোদী বিদেশে গিয়ে ভারতকে তুলে ধরছেন, অথচ রাহুল বিদেশে গিয়ে ভারতের দুর্নাম করছেন। অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চাইছেন। অমিত শাহ শুক্রবার বলেছেন, জরুরি অবস্থার পরে ইন্দিরা গান্ধী যখন শাহ কমিশনের তদন্তের মুখোমুখি, সে সময়েও তিনি ব্রিটেনে গিয়ে দেশের সমালোচনা করতে চাননি। কংগ্রেসের আমলে বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠানো হয়েছিল। শাহের যুক্তি, ‘‘এই আস্থাটা আসল। সকলের এই ঐতিহ্য মেনে চলা উচিত। বিদেশে গিয়ে কি দেশের সমালোচনা করা উচিত? অন্য দেশের সংসদে গিয়ে কি এ দেশের সংসদের নিন্দা করা উচিত? কংগ্রেসকে এর জবাব দিতে হবে।’’

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ শাহের মন্তব্যে পাল্টা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীই বিদেশে গিয়ে দেশের সমালোচনা করার প্রথা শুরু করেছিলেন। তিনিই চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা গিয়ে ভারতের আগের সরকারের নিন্দা করেছেন। কিন্তু কর্নাটকে প্রচারে বিজেপি এই হাতিয়ার করছে বুঝে কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘রাহুল গান্ধী লন্ডনে বলেছিলেন, দুর্বল গণতন্ত্র ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এর সমাধান আমরা খুঁজব। এই কথাকে তো স্বাগত জানানো উচিত। ক্ষমতা তো প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া উচিত। যিনি বিদেশে গিয়ে দেশের অপমান করেছেন।’’ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের যুক্তি, ‘‘রাহুল কখনও আমাদের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে বিদেশি শক্তির সাহায্য চাননি। উনি শুধু বলেছেন, এ দেশের গণতন্ত্র বিপদের মধ্যে রয়েছে। সেটা সকলের জানা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন