গহলৌতকে বার্তা সনিয়ার
Ashok Gehlot

সভাপতি হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে

দলীয় সূত্রে খবর, গহলৌতের  উদ্দেশ্যে বুধবার সনিয়া গান্ধীর বার্তা, আগে সভাপতি হলে, তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্ব থাকা, না-থাকা নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫০
Share:

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। ফাইল চিত্র।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতই যে কংগ্রেস সভাপতি হচ্ছেন, তা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, না কি গহলৌতই মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে যাবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে হেঁয়ালি কাটল না। তবে দলীয় সূত্রে খবর, গহলৌতের উদ্দেশ্যে বুধবার সনিয়া গান্ধীর বার্তা, আগে সভাপতি হলে, তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্ব থাকা, না-থাকা নিয়ে।

Advertisement

আজ জয়পুর থেকে দিল্লিতে এসে গহলৌত কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দু’ঘণ্টার বেশি বৈঠক করেছেন। গহলৌত গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থী হলেও কংগ্রেস সূত্রের দাবি, সনিয়া গান্ধী সভাপতি নির্বাচনে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলবেন। সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের আগে মঙ্গলবার রাতে জয়পুরে নিজের বাড়িতে কংগ্রেসের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। রাত দশটা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত সেই বৈঠকে ৭১ বছরের গহলৌত তাঁর অনুগামী বিধায়কদের জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যেখানেই যান না কেন, রাজস্থান ছাড়বেন না। তিনি যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে নারাজ, তা স্পষ্ট করে দিয়ে দিল্লিতে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে গহলৌত বলেন, “কেউ মন্ত্রী থেকেও কংগ্রেস সভাপতি হতে পারেন। এক ব্যক্তি, এক পদ-এর নীতি শুধুমাত্র মনোনীত পদের ক্ষেত্রেই খাটে। সভাপতি নির্বাচনে যে কোনও মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।’’ রাজনীতিতে নামার আগে মঞ্চে জাদুকর বাবার সঙ্গে ম্যাজিক দেখাতেন গহলৌত। আজ জাদুকরের মতোই রহস্যের হাসি হেসে বলেছেন, ‘‘একটা, দুটো কেন, এক সঙ্গে তিনটি পদ সামলাতে পারি।’’

এই পরিস্থিতিতে গহলৌত একই সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে যাবেন কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে তর্কবিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। উদয়পুরের চিন্তন শিবিরেই কংগ্রেস ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ম থেকে গহলৌতকে ছাড় দেওয়া হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা কে সি বেণুগোপাল আজ বলেছেন, ‘‘কে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে লড়ছেন, কে জিতছেন, তার উপরে এ সব নির্ভর করছে।’’ রাজস্থানের এক কংগ্রেস নেতার যুক্তি, জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, নরসিংহ রাওয়ের মতো অনেকে একই সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভাপতির পদে থেকেছেন। ফলে কংগ্রেস সভাপতির মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে সমস্যা নেই। কিন্তু কংগ্রেসেরই নেতা দিগ্বিজয় সিংহের যুক্তি, উদয়পুরের সিদ্ধান্ত মেনে গহলৌত সভাপতি হলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।

Advertisement

গহলৌত বুধবার বিকেলে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করার পরেই মুম্বই রওনা হয়েছেন। সেখান থেকে তিনি কোচি গিয়ে বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হবেন। রাজস্থানে গহলৌত-বিরোধী নেতা সচিন পাইলট বুধবার থেকেই রাহুলের সঙ্গে হাঁটছেন। রাজস্থানের জট কাটাতে কোচিতে রাহুলের সঙ্গে গহলৌত, পাইলটের বৈঠক হতে পারে। গহলৌত জানিয়েছেন, তিনি ফের রাহুলকেই সভাপতি হওয়ার বিষয়ে বোঝাবেন। ওবিসি নেতা গহলৌত শুক্রবার শিরডিতে গিয়ে সাঁইয়ের মন্দিরে পুজো দেবেন। তার পর দিল্লিতে এসে ২৬ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেবেন। তাঁকেই যে বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন, তা বোঝাতে বিধায়কদের সে সময় দিল্লিতে হাজির করবেন।

মুখ্যমন্ত্রী হতে মরিয়া পাইলট এত দিন নিজেই গহলৌতকে কংগ্রেস সভাপতি করার পক্ষে দলের অন্দরে সওয়াল করছিলেন। এখন গহলৌত দুই পদই ধরে রাখতে চাইছেন দেখে পাইলটের মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস হাইকমান্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল এ বিষয়ে অবস্থান না নিলেও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা পাইলটের পক্ষে। কিন্তু গহলৌত অন্তত গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে চাইছেন। তাঁকে ওই ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছাড়লেও নিজের অনুগামী মহেশ জোশী, গোবিন্দ সিংহ ডোতাসরা, প্রতাপ সিংহ খাচারিয়াবাস, ভঁওয়র জিতেন্দ্র সিংহ, শান্তি কুমার ধারীওয়ালদের মধ্যে থেকে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইবেন। সে ক্ষেত্রে পাইলটকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করে আপসের চেষ্টা হতে পারে।

কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে যে শশী তারুর প্রার্থী হচ্ছেন, তা-ও আজ স্পষ্ট হয়েছে। তারুর আজ কংগ্রেস সদর দফতরে গিয়ে সভাপতি নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত মধুসূদন মিস্ত্রির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে হলে এআইসিসি-র প্রতিনিধির তালিকা থেকে দশ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয়। তারুর সেই প্রক্রিয়া পুরো বুঝে নেন। কংগ্রেস নেতাদের মতে, তারুর গহলৌতের বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে সভাপতি নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলেই প্রমাণিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন