কপ্টার ঘুষ-কাণ্ডে পাল্টা আন্দোলনের পথেই সনিয়া-রাহুল

মোহন ভাগবত আর নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে নিজের পুরনো ঝাঁঝে সকাল থেকে তাতিয়ে রেখেছেন রাজপথ। মনমোহন সিংহ, রাহুল গাঁধীকে নিয়ে গ্রেফতারও বরণ করেছেন সনিয়া গাঁধী। সংসদেও কংগ্রেস শিবির তাঁকে তুলে ধরেছে ‘সিংহী’ বলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ২১:৩৯
Share:

মোহন ভাগবত আর নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে নিজের পুরনো ঝাঁঝে সকাল থেকে তাতিয়ে রেখেছেন রাজপথ। মনমোহন সিংহ, রাহুল গাঁধীকে নিয়ে গ্রেফতারও বরণ করেছেন সনিয়া গাঁধী। সংসদেও কংগ্রেস শিবির তাঁকে তুলে ধরেছে ‘সিংহী’ বলে।

Advertisement

সনিয়ার নেতৃত্বে গোটা কংগ্রেসের এই ‘সিংহগর্জন’-এর আবহেই ততোধিক শীতল ও পরিশীলিত কণ্ঠে আজ পাল্টা ওজনদার তিরটি ছুড়লেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। প্রত্যয়ী গলায় সনিয়ার গর্জন ফুস করতে বললেন, ‘‘কচু যে খায়, তারই গলা চুলকোয়। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান তো চুনোপুটি। কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে রাঘববোয়ালকেই ধরতে চাইছে সরকার। বফর্সে যা করা যায়নি, তা এ বারে হবে আশা করি।’’ আজই প্রথম তামিলনাড়ুর নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বলেছেন, ‘‘কপ্টার কাণ্ডে যাঁরা জড়িত, তাঁদের শাস্তি দেওয়া উচিত কি উচিত নয়? আমি তো ইতালি যাইনি, তাদের কাউকে চিনিও না। ইতালির মানুষ যদি কাউকে দোষী করে, আমরা পারব না কেন?’’

ভিভিআইপি কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে ইতালি আদালতের রায় আসার পর একটি বিষয় স্পষ্ট, ঘুষ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির অভিযোগ, ঘুষের টাকা পৌঁছেছে গাঁধী পরিবারে। কংগ্রেসের দাবি, তাদের দলের কোনও নেতাই ঘুষ নেননি। প্রমাণ ছাড়াই সনিয়াকে দুষছে বিজেপি। সনিয়ার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে যে প্রমাণ নেই, তা কবুল করছে মোদী সরকারও। কিন্তু একইসঙ্গে দাবি এটিও, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ বলছে ঘুষ পৌঁছিয়েছে দশ জনপথে। সেটি শুধু প্রমাণের অপেক্ষা।

Advertisement

আরও পড়ুন- ব্যারিকেড ভেঙে সংসদের পথে মিছিল, গ্রেফতার সনিয়া-মনমোহন

বিজেপির এই আগ্রাসন ঠেকাতেই আজ দিল্লির যন্তর-মন্তরে আক্রমণাত্মক হলেন সনিয়া গাঁধী। বললেন, ‘‘নাগপুরের ইশারাতেই চলছে মোদী সরকার। বেঁচে থাকতে তাদের এই ‘খতরনাক’ প্রচেষ্টা সফল হতে দেব না। ভয় দেখিয়ে, বদনাম করার যতই চেষ্টা করুক, ওদের বুঝতে হবে জীবনে আমি লড়াই করতে শিখেছি। রাষ্ট্রদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে লড়া নতুন কিছু নয়। মোদীর দিন পুরো হয়ে গিয়েছে। জল মাথার উপরে গেলে ভারতের মানুষ তাঁদের জবাব দিতে জানে।’’

এই ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিয়ে সনিয়া আজ গোটা কংগ্রেস কর্মী-নেতাদের তাতিয়ে দিতে চাইলেন বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে। মনমোহন, রাহুলকে নিয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে গ্রেফতারও বরণ করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে মোদী সরকার যে ভাবে এগোচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলনের ভিতটি আজ পুঁতে রাখলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাতের গ্যাস দুর্নীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থও হচ্ছে কংগ্রেস।

কিন্তু মোদী-অমিত শাহ জানেন, সনিয়াকে ইট মারলে পাটকেলটিও খেতে হবে। তাই আটঘাঁট বেধেই সম্মুখ সমরে নেমেছেন তাঁরা। আজ লোকসভায় সনিয়া-রাহুলের সামনেই তাই কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় একের পর এক বাণে বিদ্ধ করা হয় তাঁকে। বিজেপি সাংসদ একটু রাখঢাক করে বলেন, ত্যাগী আর ‘ত্যাগের দেবী’র তদন্ত হোক। কংগ্রেসের কোন নেতা কপ্টার-সংস্থার দালালের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা-ও খতিয়ে দেখুক সরকার। কিন্তু আর এক সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সুকৌশলে সনিয়ার নামটিই নিয়ে বসেন। বলেন, ‘‘এটি আমাদের সকলের লজ্জা, কেন কংগ্রেস সভানেত্রীর নাম এই ঘুষ কাণ্ডে আসবে?’’

সনিয়ার নির্দেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দলনেত্রীকে আড়াল করে কপ্টার-চুক্তির যাবতীয় দায় বাজপেয়ী জমানার উপরে চাপিয়ে দেন। বিজেপির আক্রমণের মুখে বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী সিংহী। তাই বিজেপি ভয় পায়। ইতালির আদালতে সনিয়া গাঁধীর নাম নেওয়ার চাপ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।’’ দলের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক। কিন্তু সরকার সে প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় সভাকক্ষ ত্যাগ করে কংগ্রেস।

এর পর কংগ্রেস-শূন্য লোকসভাতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী শীতল কণ্ঠে যা বললেন, তাতে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট। অরুণ জেটলিও ঠায় পাহারাদারের মতো বসে থাকেন গোটা বিতর্কে। পর্রীকর বলেন, প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগী অবসর নিয়েছেন ২০০৭ সালে। আর চুক্তি হয়েছে ২০১০ সালে। ত্যাগী এই চুক্তিতে সহায়কের কাজ করেছেন। ফলে অল্প কিছু খুচরো পয়সা পেয়েছেন। এই ফাইল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। তারও সিবিআই তদন্ত হবে। কংগ্রেসের আসল রাঘববোয়ালটি কে, তদন্তে সেটিই খোঁজা হচ্ছে। আর গাঁধী-বিরোধী বিজেপির নব্য সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চায়, তা হলে তারা আদালতে যাক। আদালতে তারাই বকুনি খাবে। তাদের আমলে শুরু করা সিবিআই তদন্ত কেন আদালতের নজরদারিতে করা হয়নি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন