Coronavirus

গরমিল চিনা কিটের দামেও, দুর্নীতির নালিশ 

স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, দরপত্র মারফত বরাত দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে কম ৬০০ টাকাতেই এক একটি টেস্ট কিট মিলছে দেখে বরাত দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি

বিমান থেকে নামার পরে দাম ছিল ২৪৫ টাকা। যখন আইসিএমআর কিনল, তার দাম হয়ে গেল ৬০০ টাকা।

Advertisement

দশ বা বিশ শতাংশ মুনাফা নয়। করোনা-অতিমারির সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে একেবারে ১৪৫ শতাংশ মুনাফা!

কাজে গরমিল ধরা পড়েছিল আগেই। এ বার চিন থেকে আসা র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের দামেও বড় রকমের গরমিল ধরা পড়ল। এতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সরষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে নেই তো?

Advertisement

দিল্লি হাইকোর্টের মামলায় উঠে আসা তথ্য বলছে, দেশে টেস্ট কিটের অভাব পূরণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) দুটি সংস্থার মাধ্যমে চিন থেকে পাঁচ লক্ষ র‌্যাপিড টেস্ট কিট আনায়। ওই দু’টি বেসরকারি সংস্থা কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে। চিন থেকে আনা ৫ লক্ষ টেস্ট কিটের দাম ছিল ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। সেটাই আইসিএমআর কিনেছে ৩০ কোটি টাকায়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

আইসিএমআর এই টেস্ট কিট রাজ্যগুলিকে বিলি করার পরে তাতে ঠিকমতো ফল না-মেলায় তার ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন যাচাই না- করে এ সব টেস্ট কিট রাজ্যগুলিকে বিলি করা হয়েছিল, সে প্রশ্ন আগেই উঠছিল। এ বার প্রশ্ন, কেন এত বেশি দামে এই কিট কেনা হল?

স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, দরপত্র মারফত বরাত দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে কম ৬০০ টাকাতেই এক একটি টেস্ট কিট মিলছে দেখে বরাত দেওয়া হয়। ওই কিট ৫২৮ টাকা থেকে ৭৯৫ টাকা দরে কেনা হবে বলেও আগেই ঠিক ছিল।

বাস্তবে, চিনের সংস্থা থেকে ম্যাট্রিক্স ল্যাবস এ দেশে ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় ৫ লক্ষ কিট আমদানি করে। বিমান খরচ ধরে প্রতি টেস্ট কিটের দাম পড়ে ২৪৫ টাকা। ম্যাট্রিক্স তার উপর ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা মুনাফা রেখে ২১ কোটি টাকায় সেগুলি রেয়ার মেটাবলিক্সকে বেচে দেয়। টেস্ট কিটের দাম পৌঁছয় ৪২০ টাকায়। এ বার রেয়ার ৯ কোটি টাকা মুনাফা রেখে আইসিএমআর-কে তা ৩০ কোটি টাকায় বেচে। কিটের দাম ৬০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। ম্যাট্রিক্স ও রেয়ার-এর মধ্যে বকেয়া পাওনা নিয়ে আইনি যুদ্ধ দিল্লি হাইকোর্টে পৌঁছতেই এ সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। হাইকোর্ট বলেছে, কিটের দাম ৪০০ টাকা হওয়াই যথেষ্ট।

এত দিন কী ভাবে এ সব কিট আমদানি হয়েছে, তা নিয়ে মুখ না খুললেও আজ অস্বস্তির মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, পুরো বরাত বাতিল করা হচ্ছে। কোনও অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়নি। তাই সরকারের এক পয়সাও জলে যাচ্ছে না। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, “আদালতে বিষয়টি না-গেলে তো এ সব তথ্য সরকার চেপেই রাখত।”

‘ক্যাম্পেন ফর অ্যাফর্ডেবল হেল্‌থকেয়ার’-এর আহ্বায়ক মালিনী আইসলা প্রশ্ন তুলছেন, “আইসিএমআর যে এই সংস্থাগুলির মুনাফা কামানোর কথা জানতই না, তা ভাবা খুব কঠিন। চিনের সংস্থা যে ৩ ডলারে কিট বেচছে, তা অজানা নয়।” জানা সত্বেও কেন এত বেশি দামে কিট কেনা হল? কেনই বা আইসিএমআর সরাসরি চিনা সংস্থা থেকে কিনল না? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুক্তি, সরকারি ভাবে কিনলে পুরো টাকা আগে দিতে হত। কবে কিট পাওয়া যাবে, তারও নিশ্চয়তা মিলত না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement