new delhi

ফিকে গালিবের সেই মৃত্যুনগরীও

দিল্লি শীর্ষ কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন মানুষকে ঘরে থাকা ও কোভিড বিধি মেনে চলার ডাক দিয়ে সুভাষ নগর শ্মশানের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন টুইটারে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪১
Share:

গণচিতা: করোনায় মৃতদের সৎকার গাজ়িপুরের এক শ্মশানে। সোমবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

কবরস্থানে খোঁড়ার লোক নেই। চিতা জ্বালানোরও লোকাভাব। পাল্কি চলছে না শহরে। রাস্তায় লাশের পাহাড়। সিপাহি বিদ্রোহের পরবর্তী মহামারি কবলিত সেই দিল্লিকে ‘মৃত্যুর শহর’ বলেছিলেন মির্জা আসাদুল্লা খান গালিব, তাঁর দিনলিপি বা দস্তাম্বুতে।

Advertisement

আরও আতঙ্ক নিয়ে সেই ছবিটাই ফিরে এসেছে আজকের রাজধানীতে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ফুরিযে যাচ্ছে দাহ করার কাঠ। মিলছে না সৎকারের লোক। সর্বোপরি দিল্লির বড় শ্মশানগুলিতে দীর্ঘ লাইনের পরেও দাহকার্যের সুযোগ না-আসায় স্থানে স্থানে তৈরি করতে হচ্ছে ‘মেক-শিফট’ শ্মশান। ফাঁকা মাঠ, পার্ক, এমনকি গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে দাহকাজ।

দিল্লি শীর্ষ কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন মানুষকে ঘরে থাকা ও কোভিড বিধি মেনে চলার ডাক দিয়ে সুভাষ নগর শ্মশানের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন টুইটারে। তাতে দেখা যাচ্ছে,

Advertisement

সার দিয়ে জ্বলছে চিতা। আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দেহের লাইন। মাকেন লিখছেন, “... পরীক্ষার জন্য লম্বা লাইন, হাসপাতালের ভর্তির জন্য তার চেয়েও লম্বা লাইন। এখন তো শ্মশানে দাহসংস্কারের জন্যও লাইন।” মাকেন জানালেন, আগে তাঁদের কাছে অনুরোধ আসত হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন বা প্লাজ়মা পেতে সাহায্য করার জন্য। প্রতি ঘণ্টায় আসত মৃত্যুর খবর। আগে কখনও কেউ যে অনুরোধ করেননি, এখন সেই অনুরোধও আসছে শ্মশানে এত লম্বা লাইন, দ্রুত সৎকার করিয়ে দিন।

পূর্ব দিল্লির স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা পুর নিগমের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ পঙ্কজ লুথরার বক্তব্য, ‘‘করোনার দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর ঘটনাও৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, শ্মশানে জায়গা কম পড়ছে৷ দাহ করার মতো কাঠও আর পাওয়া যাচ্ছে না৷’’ এনসিআর অঞ্চলের গাজিপুর দাহস্থলের কাছে পার্কিং লটে চিতা জ্বালানো হচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে সরাই কালে খান, ওয়াজ়িরাবাদ অঞ্চলে। পূর্ব দিল্লির মেয়র নির্মল জৈন হাত তুলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “প্রতি দিন মৃতের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে, সেই চাপ নিতে পারছে না শহরের শ্মশানগুলি। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে তাই বিকল্প ববস্থা করতে হচ্ছে।” একই ভাবে সীমাপুরি শ্মশানভূমি সংলগ্ন পার্কিং-এর মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে দাহকার্যে।

একই পরিস্থিতি কবরস্থানেও। কোভিড রোগীর দেহ এত সংখ্যায় এলে আর কিছু দিন পরই কবর দেওয়ার জায়গা শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারীরা। বাহাদুর শাহ জ়াফর মার্গের পিছনে কবরস্থানের এক কর্মী মহম্মদ নাসেরের কথায়, ‘‘আগে দিনে দুই বা তিনটি দেহ আসত। এখন দিনে কুড়ি থেকে পঁচিশটি করে দেহ আসছে। শেষ কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এখানে আর কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই প্রায়।’’

ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের একটি সরকারি হাসপাতালের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল নেটমাধ্যমে। সেখানে দেখা গিয়েছে, কী ভাবে প্রকাশ্যে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে দেহ। গত এক সপ্তাহে দিল্লির দু’টি হাসপাতালে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে অক্সিজেনের অভাবে। হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে কোভিড রোগীর মারা যাওয়ার একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়ে ত্রাস বাড়িয়েছে।

দ্বারকার বাসিন্দা, করোনা আক্রান্ত বছর ষাটের এক রোগিণীর পরিজনেরা জানান, হাসপাতালে অক্সিজেনযুক্ত শয্যা পাননি বলে চিকিৎসার জন্য বাড়িতেই অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার জন্য খোঁজ করতে, একাধিক জায়গায় তাঁদের কাছে ৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ৪৬ লিটার অক্সিজেনের সিলিন্ডারের দাম মোটামুটি পাঁচ হাজার টাকা পড়ে। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা ও কালোবাজারির জেরে দিল্লিতে সেই দাম এক দেড় লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতভর দৌড়াদৌড়ির পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় বলে জানান রোগিণীর পরিজনেরা। শহরের কিছু অংশের বিত্তবানরা বাড়িতে ওষুধ ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের গুদাম বানিয়ে ফেলছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। বহু হাসপাতালেই প্রথম ডোজ় পাওয়ার পর দ্বিতীয়টি মিলছে না বলে অভিযোগ তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে সাধারণ প্যারাসিটামল, মাল্টিভিটামিনের স্থানীয় সঙ্কট। এর কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রতিষেধক নেওয়ার পর, অথবা করোনা হতে পারে এই আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত কিছু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি ওষুধ কিনে বাড়িতে মজুত করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন