Coronavirus in India

কোভিড সারাতে বিজেপি নেতাদের ওষুধ পাঁপড় থেকে রামমন্দির!

দিনের শেষে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান নিয়ে চর্চাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে ওজনদার দুই বিজেপি নেতার নিদান! 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৪:০০
Share:

জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। —ফাইল চিত্র।

এক জন বলছেন, পাঁপড় খেলে শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। অন্য জনের বিশ্বাস, রামমন্দির নির্মাণ হলেই অতিমারির শেষ!

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে রেকর্ড ৪৯,৩১০ জনের করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লক্ষ পেরিয়েছে। ১ লক্ষ রোগী বেড়েছে মাত্র দু’দিনে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া সকালের হিসেবে অবশ্য দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২.৮৭ লক্ষ। কিন্তু সেই সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ীই আরও ৭৪০ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনায় মৃতের মোট সংখ্যা ৩০ হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যায় ফ্রান্সকে টেক্কা দিয়েছে ভারত।

দিনের শেষে এতগুলো উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান নিয়ে চর্চাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে ওজনদার দুই বিজেপি নেতার নিদান!

Advertisement

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৯ হাজার নতুন সংক্রমণ, মোট মৃত্যু ছাড়াল ৩০ হাজার

প্রথম জন নরেন্দ্র মোদী সরকারের জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। নিজের দফতরে দু’হাতে দু’প্যাকেট পাঁপড় নিয়ে নিজের ভিডিয়ো তুলিয়েছেন তিনি। প্যাকেটে লেখা ব্র্যান্ড— ‘ভাবিজি পাঁপড়’। মেঘওয়াল যেখানকার সাংসদ, সেই বিকানেরের এক সংস্থার তৈরি। মন্ত্রী বলছেন, ‘‘আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে এক পাঁপড় নির্মাতা এগিয়ে এসেছেন। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে, যা করোনার বিরুদ্ধে লড়বে।’’ সংস্থার দাবি, পাঁপড়ে রয়েছে বেশ কিছু উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

কিন্তু শরীরে ভাইরাস না-ঢুকলে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে কী করে! কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই বা কী ভাবে বলে দিলেন যে, পাঁপড় খেলে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে? মেঘওয়ালের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে হাল্কা হাসিঠাট্টা থেকে শুরু করে কড়া সমালোচনায় এমনই প্রশ্ন উঠেছে। মধ্যপ্রদেশের প্রোটেম স্পিকার রামেশ্বর শর্মার জন্য অবশ্য কোনও রসিকতা বরাদ্দ নেই। তিনি বলেছেন, ‘‘রাক্ষস বধের জন্য রামের জন্ম হয়েছিল। আর ৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেলে করোনা অতিমারির বিনাশ পর্বও শুরু হয়ে যাবে।’’

সারা বিশ্বে করোনায় ৬ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। গবেষকেরা হন্যে হয়ে প্রতিষেধক খুঁজছেন। সেখানে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের নেতারা এ ভাবেই লাগাতার ‘করোনার ওষুধ’ বাতলে চলেছেন। দিল্লিতে হিন্দু মহাসভার আয়োজনে রীতিমতো গোমূত্র পার্টি হয়েছে। বিজ্ঞানের এক বাঙালি ছাত্র বলেই ফেললেন, ‘‘এমন ভয়ঙ্কর সময়ে দাঁড়িয়ে ওঁরা কি ইচ্ছে করে লোক হাসাচ্ছেন, নাকি পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝছেন না!’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমি কোভিড-১৯ এবং অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক করেছিলাম। ওরা তা নস্যাৎ করে দিলেন। বিপর্যয় ঘটল।’’

মোদীর এক মন্ত্রী যখন এমন মন্তব্য করছেন, তখন তাঁরই সরকারের উদ্যোগে আজ নয়াদিল্লির এমসে ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকার প্রথম ডোজ়টি দেওয়া হয়েছে রাজধানীর এক স্বেচ্ছাসেবককে। এমসের গবেষক সঞ্জয় রাই জানান, ০.৫ মিলিমিটারের ডোজ়টি দেওয়ার পরে বছর তিরিশের ওই ব্যক্তির শরীরে তাৎক্ষণিক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন আজ জানিয়েছেন, কোভিডের টিকা পাওয়া গেলে তার ছাড়পত্রের বিষয়টিতে দ্রুততা আনতে বিভিন্ন ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সমন্বয় রেখে এগোবেন বলে আশা করা যায়। তিনি এ-ও জানান, সম্ভাব্য টিকার কার্যকারিতা বুঝতে সচরাচর বছরখানেক লাগে। আশাপ্রদ ফলাফল এলে অতিমারির সময়ে সেটা ছ’মাসেও করা যেতে পারে। কিন্তু সুরক্ষার সঙ্গে কোনও সমঝোতা চলবে না। সৌম্যার মতে, ‘হার্ড ইমিউনিটি’-র কৌশল মারাত্মক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যার অন্তত ৬০ শতাংশকে সংক্রমিত হতে হবে। মৃত্যু ঘটবে অনেকের। এ দিকে, কোভিডের এম-আরএনএ ভিত্তিক সম্ভাব্য টিকা তৈরি করতে চলেছে দেশীয় সংস্থা ‘জেনোভা’। তাদের সহায়তা জোগাচ্ছে কেন্দ্রীয় জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রক।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৯টি রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেছেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। কেন্দ্র বলেছে, বেশ কিছু রাজ্যে পরীক্ষা কম হচ্ছে। দ্রুত পরীক্ষা বাড়ানো ও কন্টেনমেন্টে জোর দিতে বলা হয়েছে তাদের। আজ সাংহাই কোঅপরেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু— ভারতে দু’টির হারই কম।

চিকিৎসক বর্ধন অবশ্য পাঁপড় বা রামমন্দিরের দাওয়াই দেননি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন