Coronavirus in India

সুস্থতার নিরিখে বিশ্বে প্রথম ভারত, তবে বিরাম নেই সংক্রমণ বৃদ্ধিতে

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ হাজার ৬০৫ জন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:১২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সচেতনতা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। জোর দেওযা হয়েছে ব্যাপক আকারে নমুনা পরীক্ষাতেও। তার পরেও দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৯০ হাজারের ঘরেই ঘোরাফেরা করছে। তবে করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও একই সঙ্গে বাড়ছে, যা খানিকটা হলেও স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রশাসনকে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ হাজার ৬০৫ জন। শনিবার এই সংখ্যাটা ছিল ৯৩ হাজার ৩৩৭। সেই তুলনায় এ দিন নয়া সংক্রমিতের সংখ্যা ৭৩২ কম।

তবে ভারতে যেখানে প্রতি দিন ৯০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন, আমেরিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশে সংখ্যাটা ৩০ থেকে এবং চল্লিশ হাজারের কোটাতেই আটকে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হলেও, ওই সময়ে আমেরিকায় নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ২০৬ জন। ব্রাজিলে সংখ্যাটা ৩৩ হাজার ৫৭। অর্থাৎ আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতের দৈনিক সংক্রমণ অনেক বেশি। গত দেড় মাস ধরে এই ধারা অব্যাহত।

Advertisement

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতে ৫৪ লক্ষ ৬১৯ জন মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্ব তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ লক্ষ ২৮ হাজার ২৪০।

একই সঙ্গে যত দিন যাচ্ছে আমেরিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলিতে মৃত্যুসংখ্যা ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। ভারতে কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক মৃত্যু এক হাজারের উপরই ঘোরাফেরা করছে। শনিবার দেশে ১২৪৭ জন করোনা রোগী প্রাণ হারান। এ দিন তা কমে ১১৩৩-এ দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত দেশে ৮৬ হাজার ৭৫২ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন।

নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যু অব্যাহত থাকলেও, প্রতিদিন যত সংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাতে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত দেশে সবমিলিয়ে ৪৩ লক্ষ ৩ হাজার ৪৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৭৯.৬৮ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৪ হাজার ৬১২ জন। সুস্থতার নিরিখে বর্তমানে বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল (৩৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯৩)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা (২৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৪৬)। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ১০ হাজার ৮২৪।

প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত দু’দিন দেশের সংক্রমণের লাগাতার বাড়লেও (৯.৫৮ ও ১০.৫৮), এ দিন তা কমে ৭.৬৭ শতাংশ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বাধিক ১২ লক্ষ ৬ হাজার ৮০৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তার পরেও সংক্রমণের হার কমা শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজ্যগুলির মধ্যে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতিই সবচেয়ে উদ্বেগজনক। এখনও পর্যন্ত ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৫ জন মানুষ সেখানে নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আট লক্ষ ৫৭ হাজার ৯৩৩ জন রোগী। কোভিডের প্রকোপে সেখানে প্রাণ গিয়েছে ৩২ হাজার ২১৬ জনের।

Advertisement

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছ’লক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৬। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন পাঁচ লক্ষ ৩০ হাজার ৭১১ জন করোনা রোগী। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৩০২ জনের। তৃতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৭৭। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার লক্ষ ৮১ হাজার ২৭৩ জন। সবমিলিয়ে আট হাজার ৭৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে।

তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে কর্নাটক। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ১১ হাজার ৩৪৬। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ লক্ষ ৪ হাজার ৮৪১ জন। প্রাণ হারিয়েছেন সাত হাজার ৯২২ জন করোনা রোগী। পঞ্চম স্থানে থাকা উত্তরপ্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ৪৮ হাজার ৫১৭। সুস্থ হয়ে উঠেছেন দু’লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৯০ জন রোগী। কোভিডের প্রকোপে প্রাণ গিয়েছে চার হাজার ৯৫৩ জনের।

মাঝে রাজধানীতে করোনার প্রকোপ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও, সেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দিল্লি। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দু’লক্ষ ৪২ হাজার ৮৯৯। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দু’লক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯০ জন রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন চার হাজার ৯৪৫ জন। সপ্তম স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল। এখনও পর্যন্ত সেখানে দু’লক্ষ ২১ হাজার ৯৬০ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে এক লক্ষ ৯৩ হাজার ১৪ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত সেখানে চার হাজার ২৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

এই তালিকায় অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে ওডিশা, তেলঙ্গানা, বিহার এবং অসম। এই চার রাজ্যে মোট সংক্রমণ এখনও দু’লক্ষ ছোঁয়নি। একমাত্র তেলঙ্গানা বাদে (এক হাজার ৩৩) বাকি রাজ্যগুলিতে মৃত্যুসংখ্যাও হাজারের কোটায় প্রবেশ করেনি। যদিও প্রথম দশের নীচে থাকা গুজরাত (তিন হাজার ৩০২), রাজস্থান (এক হাজার ৩২২), হরিয়ানা (এক হাজার ১২০), মধ্যপ্রদেশ (এক হাজার ৯৪৩) এবং পঞ্জাবে (দু’হাজার ৭৫৭) মৃত্যুসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমাকে চুপ করাতে অন্য এক নারীকে মিথ্যেয় শামিল করতে হল’, যৌন হেনস্থার অভিযোগে অনুরাগের নিশানায় কঙ্গনা​

আরও পড়ুন: ‘ঘরে-বাইরে’ বিক্ষোভের মাঝেই রাজ্যসভায় পেশ কৃষি বিল​

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন