প্রতীকী ছবি
গত মঙ্গলবার থেকেই চিন থেকে আসা অ্যান্টিবডি কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। গত সাত দিন কিটগুলির বিচার-বিশ্লেষণ করে অবশেষে রাজ্যগুলোর কাছ থেকে কিটগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আইসিএমআর। তারা জানিয়েছে, বিক্রয়কারী সংস্থা যে মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বজায় রাখতে ব্যর্থ। তাই অব্যবহৃত কিট বিক্রেতা সংস্থাকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
আইসিএমআরের দাবি, এ পর্যন্ত ওই কিটের পিছনে একটি টাকাও খরচ হয়নি। কিন্তু যে ভাবে করোনা অতিমারির মধ্যে কেন্দ্রকে ওই কিট বাতিল করতে হল, তাতে সরকারের দূরদর্শিতার অভাবই স্পষ্ট বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এর ফলে হটস্পটগুলিতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা করে দেখার যে নীতি নেওয়া হয়েছিল, তা কার্যত বাতিলের পথে।
প্রথাগত আরটি পিসিআর কিটের চাহিদা এখন দুনিয়া জুড়েই। ভারতের হাতে শুরু থেকেই সীমিত সংখ্যক কিট থাকায় তা মেপে ব্যবহার করতে নির্দিষ্ট পরীক্ষা নীতি হাতে নেয় মোদী সরকার। কিন্তু সেই নীতিতে যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে বিরোধীদের লাগাতার সমালোচনার মুখে চিনের দু’টি সংস্থার কাছ থেকে অ্যান্টিবডি কিট আনার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। শুরু থেকেই আইসিএমআর বলে আসছে, প্রথাগত কিটের কোনও বিকল্প নেই। অ্যান্টিবডি কিট মূলত অতিমারি সংক্রান্ত গবেষণার কাজেই ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সব জানা সত্ত্বেও তবে ঘটা করে পাঁচ লক্ষ কিট এনে তা রাজ্যগুলির হাতে তুলে দেওয়ার দরকার কী ছিল?
তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, ওই সিদ্ধান্ত সরকারের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার অভাবের ফল। বিরোধীদের প্রশ্ন, যেখানে চিনের ওই সংস্থাগুলির কিট অন্যান্য দেশ আগেই ফিরিয়ে দিয়েছে, সেখানে কেন সরকার ওই কিট আনার সিদ্ধান্ত নিল? গোটা বিষয়টিতে মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসেবে নাম জড়িয়েছে গুজরাতের একটি সংস্থার। সরকারকে বেশি দামে কিট দেওয়া হচ্ছে বলেও আদালতে মামলা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে অতিমারির মধ্যে কিট কেলেঙ্কারি সামনে আসায় রীতিমতো অস্বস্তিতে কেন্দ্র।
আজ কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত চিনা অ্যান্টিবডি কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা হবে না। ফলে হাতে রইল প্রথাগত কিটই। মন্ত্রকের একাংশের মতে, যা কিট আছে তাতে সাত থেকে নয় দিন চলবে। আগামী দিনে পরীক্ষার জন্য কি যথেষ্ট কিট পাওয়া যাবে? প্রশ্ন উঠছে। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় কিট রয়েছে। যে পরীক্ষা নীতি মেনে এগোচ্ছি, তাতে এখনও আমাদের সব পরীক্ষাগারের দৈনিক পরীক্ষা করার যে ক্ষমতা, তার মাত্র অর্ধেক ব্যবহার হচ্ছে। পরিস্থিতি যাচাই করে আমরা কয়েক ধাপ এগিয়ে কাজ করি।’’
সূত্রের খবর, চিনের কিট বাতিল করে এ বার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কিট আনানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র। কিন্তু দরপত্র ডেকে তা চূড়ান্ত করতে অন্তত এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে, তা মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারাই। তত দিন হাতে যা পিসিআর কিট রয়েছে, তা দিয়েই পরীক্ষা চালানো ছাড়া যে উপায় নেই, তা মেনে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।