মণিপুরে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হল সিআরপিএফ এবং বিএসএফ-কে। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরের পাহাড় লাগোয়া উপত্যকা অঞ্চলে মেইতেই কৃষকদের সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হল দুই কেন্দ্রীয় বাহিনী, সিআরপিএফ এবং বিএসএফ-কে। সাম্প্রতিক সময় কুকি জনজাতি অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীদের উপর হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তার প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারও ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেই কৃষকদের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দু’জন কৃষক তাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। কুকি জঙ্গিরাই ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইম্ফল উপত্যকা এবং পাহাড়ি এলাকার সীমানাবর্তী এলাকার গ্রামগুলিতে পাহারার দায়িত্ব থাকবে বিএসএফের হাতে। পূর্বের পশ্চিমবঙ্গ-অসম এবং পশ্চিমে পঞ্জাব সীমান্তে এ ধরনের দায়িত্ব পালনে তারা অভ্যস্ত।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দুশো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
পরবর্তী সময়ে ইম্ফল হাই কোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কারণ, কুকিদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। মূলত ইম্ফল উপত্যকার সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। কুকিদের অভিযোগ, হিংসা থামানোর অজুহাতে মেইতেই প্রভাবিত পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় ধীরে ধীরে পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের জমি দখলের অভিযান শুরু করা হচ্ছে। যদিও মণিপুর পুলিশ সম্প্রতি মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাম্বাই টেঙ্গলের শীর্ষনেতা কানন সিংহকে গ্রেফতার করায় এবং বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের পরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন মণিপুরের আদি বাসিন্দারা।