ধোঁয়াশায় ঢেকেছে রাজধানী। ছবি: পিটিআই।
বাতাসের দূষণ কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে চিন্তায় দিল্লির সরকার। দূষণের মাত্রা বিবেচনা করে তাই রাজধানীতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটল তারা। শুধু তা-ই নয়, সরকারি কাজের সময়েও পরিবর্তন করেছে সরকার। একসঙ্গে রাস্তায় যাতে বেশি গাড়ির চাপ না-পড়ে সেই কারণে এই পরিবর্তন বলে জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত।
দিল্লি সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরকারি অফিসে কাজের সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছে। অন্য দিকে, পুরসভায় কাজকর্ম শুরু হবে সকাল ৯টায়। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কাজ হবে দিল্লির পুরসভাগুলিতে। মনে করা হচ্ছে, সময়ের পরিবর্তনের ফলে দিল্লির রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমবে।
এ ছাড়াও, দিল্লিবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী রেখার আহ্বান, প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না-করার জন্য। তার পরিবর্তে গণপরিবহণ ব্যবহারের উপর জোর দিতে বলেন তিনি। ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে একসঙ্গে তিন-চার জন যদি কোনও গাড়িতে যাতায়াত করেন, তা হলেও দিল্লির রাস্তায় তুলনামূলক গাড়ির সংখ্যা কমবে, আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী।
গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ু দূষণ মাপার মাপকাঠি হল ‘ভারত স্টেজ’ (বিএস)। সেই মাপকাঠির মান পূরণ করে না, ভিন্রাজ্যের এহেন গাড়ি দিল্লিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সরকারের তরফে। বিবৃতি জারি করে এই নিয়ম কার্যকরের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানী দিল্লিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চার স্তরীয় পরিকল্পনা রয়েছে ‘কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট’ (সিএকিউএম)-এর। একেই বলে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (জিআরএপি)। দিল্লিতে বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’ হলে জিআরএপি-১ চালু করা হয়। এই সময় রাস্তায় মাঝেমধ্যে জল ছেটানো হয়। পরিস্থিতি ‘আরও খারাপ’ হলে জিআরএপি-২ চালু করে সরকার।
জিআরএপি-২ কার্যকর থাকাকালীন, রোজ রাস্তায় জল ছেটানো হয়। জেনারেটরের ব্যবহার কমাতে বিদ্যুতের জোগান বৃদ্ধি করা হয়। পার্কিংয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় নাগরিকদের নিজের গাড়ির ব্যবহার কমাতে। এই সময়ে দিল্লির রাস্তায় মেট্রো, ব্যাটারিচালিত বাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এর পরে বাতাসের গুণমান আরও খারাপ হলে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরেরও নিয়ন্ত্রণবিধি রয়েছে দিল্লিতে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুসারে, শনিবার দিল্লির বেশ কিছু জায়গায় বাতাসের গুণমান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ৪০০ পার করে গিয়েছে। বাতাসের গুণমান ৪০০ পেরিয়ে গেলে সেটিকে ‘ভয়ানক’ বলে বিবেচনা করা হয়। দিল্লির ৩৮টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে অনেক জায়গায় বায়ুর মান ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকটি জায়গায় আবার একিউআই ‘ভয়ানক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি হল ওয়াজিরপুর (একিউআই ৪২০), বুরারি (একিউআই ৪১৮), বিবেক বিহার (একিউআই ৪১১)।
সিপিসিবি-র তথ্য অনুযায়ী, একিউআই যদি ০-৫০ থাকে, তা হলে সেটি ভাল। ৫১-১০০ হলে সন্তোষজনক। ১০১-২০০ হলে মাঝারি। ২০১-৩০০ হলে খারাপ। ৩০১-৪০০ হলে অত্যন্ত খারাপ। ৪০১-৫০০ হলে ভয়ানক।