corona virus

শৈশব কেটেছিল অনাথাশ্রমে, হোটেলে মজুরি খাটা অভাবী বালক আজ জেলাশাসক, সামলাচ্ছেন করোনা-সঙ্কট

একদিন মায়ের হাত ধরে আব্দুল চললেন অনাথাশ্রমের দিকে। পিছনে পড়ে রইল দাদা আর চার দিদি। আর পড়ে থাকল স্মৃতিমাখা চালাঘর, খেলার ঘর, নিজের শৈশব।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫৪
Share:
০১ ১৬

১।মায়ের উপর তীব্র অভিমান জমেছিল। পাঁচ বছর বয়সে তাকে অনাথাশ্রমে রেখে আসার জন্য। ১৭ বছর বয়স অবধি তিনি ছিলেন সেই আশ্রয়েই। মাঝে দু’বার পালিয়েছিলেন পরিবারের টানে। দিনগুলোর কথা মাঝে মাঝেই ভিড় করে আসে কোল্লামের জেলাশাসক আব্দুল নাসার বি-এর মনে।

০২ ১৬

পাঁচ বছর বয়সে তিনি হারান বাবাকে। ছ’জন সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন মা, মানহুম্মা। কেরলের থালাসেরিতে অক্ষরজ্ঞানহীন এই বধূ চেয়েছিলেন তাঁর সন্তানরা যেন লেখাপড়া শেখে।

Advertisement
০৩ ১৬

সন্তানদের মুখে খুদকুড়ো তুলে দিতে কত রকমের কাজ যে মানহুম্মা করেছেন, তার হিসেব নেই। চরম অনটনেও বুঝলেন, তাঁর সবথেকে ছোট সন্তান আব্দুল মেধাবী এবং বাকিদের থেকে আলাদা।

০৪ ১৬

মানহুম্মা ঠিক করলেন, যত কষ্টই হোক, তিনি লেখাপড়া শেখাবেন আব্দুলকে। কিন্তু তাকে বাড়িতে রাখলে সেটা কার্যত অসম্ভব। শুভানুধ্যায়ীরা খোঁজ দিলেন এক অনাথাশ্রমের। যেখানে থাকলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সঙ্গে হবে লেখাপড়াও।

০৫ ১৬

একদিন মায়ের হাত ধরে আব্দুল চললেন অনাথাশ্রমের দিকে। পিছনে পড়ে রইল দাদা আর চার দিদি। আর পড়ে থাকল স্মৃতিমাখা চালাঘর, খেলার ঘর, নিজের শৈশব।

০৬ ১৬

অনাথাশ্রমে গিয়ে বুঝলেন, পিছনে পড়ে রইলেন মা-ও। তাকে সেখানে রাখার পরে মায়ের ফিরে যাওয়া দেখবেন না বলে দু’চোখ বন্ধ করে ছিলেন। চোখের পাতা তো বন্ধ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু চোখের জল আটকাতে পারলেন কই!

০৭ ১৬

বাড়ির সবাইকে ছেড়ে আশ্রমে থাকতে খুব কষ্ট হত। কিন্তু তার মাঝেই মনে পড়ত, তাঁকে পড়ানোর জন্য মজুরের কাজ নিয়েছেন বড় দাদা। চার দিদি বিড়ি বাঁধার কাজ করছেন। তখন কিছুটা প্রশমিত হত ক্ষত।

০৮ ১৬

কিন্তু সেইসঙ্গে স্বার্থপরের মতো মনে হত নিজেকে। বাড়ির সবাই পরিশ্রম করছে তাকে পড়ানোর জন্য! ভাবলেই আর বইয়ে চোখ রাখতে ইচ্ছে করত না। দু’বার পালিয়েও গেলেন অনাথাশ্রম থেকে।

০৯ ১৬

৩০-৪০ কিমি দূরে কান্নুরে গিয়ে হোটেল রেস্তোরাঁয় কাজ নিতেন তিনি। কিন্তু বেশিদিন সে কাজও করতে পারতেন না। বিনা কারণে হোটেল মালিকের বকুনি খেয়ে আবার ফিরতেন অনাথাশ্রমে। পকেটে থাকা পারিশ্রমিক রেখে দিতেন সযত্নে। মা যখন আসতেন দেখা করতেন, তুলে দিতেন তাঁর হাতে।

১০ ১৬

তার আগেই অনাথাশ্রমে থাকার সময়ে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যা মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল আব্দুল নাসারের জীবনের। তাঁদের আশ্রমে এসেছিলেন অমিতাভ কান্থ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে প্রথম আইএএস আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আব্দুল নাসার।

১১ ১৬

কিন্তু ভবিষ্যতে আমলা হওয়ার থেকেও আব্দুলের সে সময় জরুরি মনে হয়েছিল অর্থ উপার্জন। তাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে পালিয়ে যেতেন রেস্তরাঁয় কাজ নেবেন বলে।

১২ ১৬

অনাথাশ্রম থেকে পালিয়ে যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আব্দুল তিরস্কৃত হতেন না। মেধাবী এই ছাত্রকে পছন্দ করতেন আশ্রমের স্কুলশিক্ষকরা। নিজের মেধার পাশাপাশি তাঁদের সাহায্য আর বাড়ির লোকের উৎসাহই ছিল আব্দুলের লক্ষ্যপূরণের অনুঘটক।

১৩ ১৬

পড়াশোনার শেষে ১৯৯৫ সালে জুনিয়র হেল্থ ইনস্পেক্টরের চাকরি পান কেরলের স্বাস্থ্য দফতরে। সে বছরই তিনি বিয়ে করেন রুকসানাকে। মায়ের পরে রুকসানাই ছিলেন দ্বিতীয় নারী, যিনি আরও পড়াশোনার পথে উৎসাহ দিয়েছিলেন আব্দুলকে।

১৪ ১৬

২০০৬ সালে তিনি নিযুক্ত হন ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে। তার পিছনে স্ত্রী রুকসানার অনুপ্রেরণাই কাজ করেছিল। স্বীকার করেন আব্দুল। তবে জীবনে একটা আক্ষেপ তাঁর রয়েই গিয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি যখন উন্নীত হলেন আইএএস অফিসারের পদমর্যাদায়, সেই আনন্দের দিন দেখার জন্য ছিলেন না তাঁর মা, মানহুম্মা। তার তিন বছর আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন।

১৫ ১৬

গত বছর আব্দুল নিযুক্ত হয়েছে কোল্লামের জেলাশাসক পদে। দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন করোনাভাইরাসের সঙ্কট। সম্প্রতি কেরল ক্যাডারের জুনিয়র আইএএস অফিসার অনুপম মিশ্র কোয়রান্টিন-নিয়ম ভেঙেছেন।

১৬ ১৬

বিদেশে মধুচন্দ্রিমা কাটিয়ে এসেও তিনি গৃহ পর্যবেক্ষণে না থেকে চলে গিয়েছিলেন নিজের শহর কানপুরে। অভিযুক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন কোল্লামের জেলাশাসক আব্দুল নাসার বি। (ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement