প্রকাশ্যে সংসদের ভিতরে ও বাইরে মোদী সরকারের ঘোষিত অবস্থান, ‘পরিপক্ক কূটনীতির’ মাধ্যমে ভারত, ভুটান এবং চিনের সীমান্তবর্তী ডোকলাম অঞ্চলের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। ভারতকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়, এমন কোনও পরিস্থিতি আর সেখানে নেই।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিদেশ মন্ত্রক মুখে যাই বলুক বাস্তব পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। শিলিগুড়ি করিডর থেকে সামান্য দূরে ডোকলামে রাস্তা, বাঙ্কার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরি থেকেই বিবাদ শুরু হয়েছিল দু’দেশের। ৭৩ দিন ভারত এবং চিনের সেনা মুখোমুখি অবস্থান করার পরে ফিরে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এক বছর ধরে ভারতের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও ডোকলামে ইতিমধ্যেই তৈরি করা রাস্তা, বাঙ্কার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো এখনও রয়েই গিয়েছে। নষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ ছোট মাপের একটি সামরিক মঞ্চ তৈরি করেই রাখা হয়েছে। আবার কোনও সংঘাত-বিন্দু তৈরি হলে পিএলএ সহজেই দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে বিপুল সমর ভাণ্ডার নিয়ে।
এই মাসের শেষে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসছেন দিল্লিতে। গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ভারত নতুন করে তুলে ধরতে চলেছে তাঁর কাছে। ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার দিকটিও তাঁকে বলা হবে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে গিয়ে একের পর এক ছাড় বেজিংকে দিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। কিন্তু উল্টো দিক থেকে চোখে পড়ার মতো প্রতিদান এখনও পায়নি সাউথ ব্লক। আর ভোটের বাজারে এই অসামঞ্জস্যকে তুলে ধরতে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে, যা মোদী সরকারের আরও একটি অস্বস্তির কারণ। গত সপ্তাহে তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুও লোকসভায় প্রশ্ন করেন, ‘‘শিলিগুড়ি করিডরের কাছে চিন যে পরিকাঠামো তৈরি করেছিল, তা কি তারা গুটিয়ে নিয়েছে?’’ উত্তর এড়িয়ে যান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
সূত্রের খবর— বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টকে যে ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে, তার পিছনেও এই একই কারণ। সেখানে ওই অঞ্চলের প্রকৃত অবস্থার বিবরণ বিশদে রয়েছে বলে খবর। সরকার তাই এখনই সে রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না। সীমান্তের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে সিকিম ও অরুণাচলে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী-সহ ওই কমিটির সদস্যরা। সম্প্রতি টুইটারে বিষয়টি নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনাও করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। বলেছেন, ‘‘সুষমাজির মতো এক জন ভদ্রমহিলা যে ভাবে চিনা শক্তির কাছে মাথা নত করে মুখে কুলুপ আটকে রয়েছেন, তা দেখে অবাক হতে হয়! নেতার আত্মসমর্পণ করার অর্থ, সীমান্তে বীর জওয়ানদের ঠকানো।’’