রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ। যৌনাঙ্গ ঢাকা রয়েছে শুধুমাত্র একটা ট্রানজিস্টর দিয়ে। আসন্ন ছবি ‘পিকে’-র পোস্টারে আমির খানকে এই অবস্থায় দেখা যেতেই বিতর্কের ঝড় ওঠে দেশ জুড়ে। ছবি মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিল এক মানবাধিকার সংগঠন। সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টই জানাল, “ভাল না লাগলে, দেখবেন না!” ছবি মুক্তি পাচ্ছেই।
‘বিতর্কিত’ তকমা দিয়ে এ দেশে ছবি নিষিদ্ধ করার নজির কম নয়। বহু ক্ষেত্রেই যদি বা ছবি মুক্তি পায়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও আদালতের চাপে পড়ে বাদ চলে যায় বিতর্কিত অংশ। বরং অনেকের মতেই আজ সুপ্রিম কোর্ট যা বলল, সেটাই এক কথায় নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢা এ দিন বলেন, “ফিল্ম তো বিনোদন। ছবি মুক্তিতে বাধা দেওয়ার অর্থ, কারও না কারও অধিকার ভঙ্গ। তা ছাড়া সবই তো আজকাল ইন্টারনেটে দেখতে পাওয়া যায়। কী লুকোবেন আপনি?”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আইনজীবীর পরের যুক্তি ছিল, ‘পিকে’-র বেশ কিছু দৃশ্য সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানতে পারে। ব্যাহত হতে পারে শান্তিশৃঙ্খলাও। সে যুক্তিও নাকচ করে দিয়ে শীর্ষ আদালত বলে, “শিল্প ও বিনোদনের ক্ষেত্রে জোর করে ধর্ম টেনে আনার কোনও মানে হয় না!”
৩১ জুলাই পিকে-র পোস্টার মুক্তি পাওয়ার পর দেশ জুড়ে যখন সমলোচনার ঝড় ওঠে, অনেকে বলেছিলেন দৃশ্যটা নকল। নগ্ন হয়ে মোটেই শু্যট করেননি আমির। কেউ কেউ আবার বলেন, “সবই আসলে চমক।” মুখ খুলেছিলেন বেশ কিছু নেতামন্ত্রীও। এর মধ্যে বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্র বলেন, “এক জন অভিনেতা, যিনি নাকি নিজেকে সমাজসেবী বলে দাবি করেন... তাঁর পোস্টার রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। গায়ে ছিটেফোঁটাও জামাকাপড় নেই।”
আজ তাতে আদালত এ প্রশ্নও তোলে, “এতে কী কোনও ভাবে কারও আইনি বা সাংবিধানিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? কিন্তু ছবি মুক্তিতে যদি বাধা দেওয়া হয়, তা হলে প্রযোজক-পরিচালকের অধিকার খর্ব করা হবে।” বিচারপতি এ-ও জানান, ইন্টারনেটের দৌলতে আজ সবই তরুণ প্রজন্মের হাতের নাগালে পৌঁছে গিয়েছে। তা ছাড়া ভারতীয় সমাজ এখন যথেষ্ট পরিণতও হয়েছে। বিনোদনের সঙ্গে অন্য বিষয়গুলোর তফাত করতে শিখেছে তারা। এবং সব শেষে লোঢার সংযোজন, “এর পরও যদি আপনাদের ভাল না লাগে, ছবিটা দেখবেন না।”