প্রতিবেশী বাংলাদেশে জঙ্গিহানার ঘটনার প্রেক্ষিতে শিলচরের ‘ইদ-মিলন সন্ধ্যা’ এ বার বাতিল করা হল।
ইদ উপলক্ষে প্রতি বছর শিলচরে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি মিলনোৎসবের আয়োজন করা হয়। দেশ-বিদেশের শিল্পীদের আমন্ত্রণ করে গান-বাজনা হয়। চলে সংবর্ধনা, বক্তৃতা পর্বও। এ বারও যথারীতি তার প্রস্তুতি চলছিল। বাংলাদেশের কালা মিয়া ও সহশিল্পীদের বাউল বিরহী গানের জন্য কথা পাকা হয়েছিল। আগামী রবিবার সেই কর্মসূচি ওঙয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত উদযাপন কমিটির সভাপতি মিলনউদ্দিন লস্কর আজই তা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, ‘‘কমিটির পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। সবাই একযোগে বাংলাদেশের জঙ্গিহানার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঠিক করেছেন, এ বছর এই মিলন-সন্ধ্যা হবে না। বাংলাদেশের জঙ্গি হানার কথা উল্লেখ করে মিলনবাবুর বক্তব্য, ‘‘বর্বরতা বললেও কম বলা হয়। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বাংলাদেশে এমন ঘটনার পর সীমান্ত লাগোয়া এই অঞ্চলে গানবাজনায় কারও মন সায় দিচ্ছিল না। তাই প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে থাকলেও তা বাতিল কর হল।’’ উদযাপন কমিটির কর্মকর্তা তৈমুর রাজা চৌধুরী, আমিনুল হক লস্কর, মহবুবুল বারি, লুৎফা আরা চৌধুরী ও ইমাদউদ্দিন বুলবুলও সভাপতির পাশেই ছিলেন।
বাংলাদেশের জঙ্গিহানার কথা কাল প্রায় প্রতিটি ইদগার জমায়েতে উঠে আসে। সবাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু জনগণকে লক্ষ্য করে হামলার নিন্দা জানান। বিশেষ করে অন্য বছরের মতো এ বারও ভিনধর্মী জনতা যখন ইদের শুভেচ্ছা জানাতে শিলচরের ইটখলা ইদগায় যান ওই আলোচনা বার বারই ঘুরেফিরে আসে।
ইদগায় আয়োজিত শুভেচ্ছা-অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন, শিলচরের বিজেপি পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদীশ দাস, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাদল দে, পৃথক বরাক দাবি কমিটির শুভদীপ দত্ত, সুবীর কর, অমলেন্দু ভট্টাচার্য, হারাণ দে, দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস, সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, সাধন পুরকায়স্থ, তুষারকান্তি নাথ-সহ বহু বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের স্বাগত জানান ইদগা কমিটির সভাপতি আফতাবুর রহমান বড়ভুইয়া, সোনাইয়ের বিজেপি বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর, তৈমুর রাজা চৌধুরী, মিলন উদ্দিন লস্কর, ইমাদউদ্দিন বুলবুল প্রমুখ। আমিনুল হক লস্কর বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ভারতের মতো সংখ্যালঘু সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আফতাবুর রহমান বড়ভুইয়া ধর্মের নামে অধর্মের কাজ যারা করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ডাক দেন। শিক্ষিত তরুণরা কোন মন্ত্রবলে সন্ত্রাসী হচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে তিনি সমাজবিজ্ঞানীদের আহ্বান জানান।
জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর দু’জনেই হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ের এ ধরনের প্রয়াসের সাধুবাদ জানান। বিশ্বনাথন বলেন, গত বছরও তিনি এই শুভেচ্ছা সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ বার উপস্থিতি অনেক বেড়েছে, তা শুভ লক্ষণ। নীহারবাবুর কথায়, আজকের সঙ্কটের সময়ে এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ভাগায় কাল ইদের নামাজ শেষে বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিবাদে একটি মৌন মিছিলও বের হয়। বহু মানুষ তাতে সামিল হন।