ভোটার তালিকা। —ফাইল চিত্র।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) নিয়ে ফের ব্যাখ্যা দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওই সমীক্ষার ফলে প্রায় ৫৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে বলে আগেই জানিয়েছিল কমিশন। মোট কত জনের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে, তা ১ অগস্ট প্রকাশ করবে কমিশন। তবে তাদের দাবি, এটি কোনও চূড়ান্ত তালিকা নয়। এটি একটি খসড়া তালিকা। কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে তাঁরা সে বিষয়ে আবেদন করার জন্য এক মাস সময় পাবেন।
রবিবার এক বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, কোনও বৈধ ভোটার নিজের দাবি এবং অভিযোগ জানানোর জন্য ১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা নিজেদের নাম পুনরায় তালিকাভুক্ত করার সুযোগ পাবেন। কমিশনের বক্তব্য, ভুলবশত কাউকে তালিকায় যোগ করা বা বাদ দেওয়া হয়েছে কি না, তা যাচাই করার জন্য এক মাস সময় থাকছে। বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, “এর পরেও কেন তারা (রাজনৈতিক দলগুলি) এত হট্টগোল করছে তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।”
সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, রবিবার বিবৃতি প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেছে কমিশন। সেখানে তারা জানিয়েছে, কাজ কী ভাবে এগিয়েছে, তা চাইলেই নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের থেকে যাচাই করে নিতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলিকে খোঁচা দিয়ে কমিশনের আরও প্রশ্ন, রাজনৈতিক দলগুলি কেন বুথ স্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-দের বলছে না ১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজেদের দাবি এবং আপত্তির কথা জানাতে? বস্তুত, রাজনৈতিক দলগুলির নিযুক্ত বিএলএ-রা নির্বাচন কমিশনের বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে মিলেই ভোটার তালিকা তৈরি বা সংশোধন করেন। কমিশনের প্রশ্ন, “কোনও কোনও ব্যক্তি কেন এমন একটি ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যে খসড়া তালিকাই চূড়ান্ত? এসআইআর-র নির্দেশিকা অনুসারে কিন্তু তা নয়।”
চলতি বছরের শেষেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য কমিশনের বিশেষ সমীক্ষায় প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এই নিয়ে মামলাও হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা বিচারাধীন। আপাতত কমিশনের কাজে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত।
বস্তুত, বিহারের পরে অন্য রাজ্যগুলিতেও একই ভাবে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কমিশনের এই সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গত সোমবার থেকে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। একযোগে সংসদের বাইরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন বিরোধী দলের সাংসদেরা। বিহারে নির্বাচন কমিশনের কাজ নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
এরই মধ্যে গত ২৫ জুলাই বিহারে ভোটার তালিকার প্রথম দফার সংশোধনের কাজ শেষ হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে অনেকে ফর্ম ফিল আপ করে ফেরত দেননি। আবার অনেকে কোনও না কোনও কারণে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে চাননি।
কমিশন আগেই জানিয়েছিল, অন্তত ৫৬ লাখ ভোটার বাদ পড়তে চলেছে বিহারে। কমিশনের হিসাব, ৩৬ লক্ষ ভোটার তাঁদের পুরনো ঠিকানা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বর্তমানে স্থায়ী ভাবে অন্যত্র থাকেন তাঁরা। সেই সব রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোটার হয়ে গিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে আবার যোগাযোগই করা যায়নি। সাত লাখ এ রকমও ভোটার রয়েছেন, যাঁদের একাধিক জায়গার ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত রয়েছে।