লাইন: রবিবার ত্রিপুরার ভোটে। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
ভোটের আগে থেকেই যা নিয়ে চর্চা ছিল, ত্রিপুরায় ভোটের দিন নজিরবিহীন বিতর্ক বাধল সেই ইভিএম নিয়েই! রাজ্যের ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রত্যেকটাতেই বিগড়়ে গেল কিছু না কিছু ইভিএম। দিনভর হয়রানি হল ভোটারদের। গোটা ঘটনায় ‘ষড়়যন্ত্রে’র গন্ধ পাচ্ছে শাসক সিপিএম।
বেশ কিছু দিন আগেই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজের দলকে ভোট দিলেও তা তাঁদের প্রতীকে আসবে! সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিএম। ইভিএমে কারসাজির সম্ভাবনা উড়়িয়ে দিলেও কার্যক্ষেত্রে বিভ্রাট সামাল দিতে ১৮৪ জনের ইঞ্জিনিয়ার টিম মজুত রেখেছিল কমিশন। ভোট শুরু হতে রবিবার সকালে দেখা গেল, রামনগর কেন্দ্রের শিশুবিহারী স্কুলের যে বুথের ভোটার মানিকবাবু, সেখানে ইভিএম কাজ করছে না! যন্ত্র সারানোর পরে ভোট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তত ক্ষণে খবর, বিপ্লববাবুর কেন্দ্র বনমালীপুরেও ইভিএম বিকল! এর পর গোটা দিন ধরে নানা প্রান্ত থেকে শুধুই ইভিএম বিগড়়ে যাওয়ার অভিযোগ! সিপিএমের হিসাবে, ৫৯টা কেন্দ্রের ৩,১৭৪ বুথের মধ্যে ৫১৯টি বুথে ইভিএম গে্ালযোগ হয়েছে। কমিশনের কাছে এর জবাবদিহি চেয়েছে বামফ্রন্ট।
বেনজির এমন ঘটনার মুখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়়েছে কমিশনও। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরনী কান্ত প্রাথমিক ভাবে বলেছেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই ইঞ্জিনিয়ারেরা অনেক জায়গায় মেরামত করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে নতুন ইভিএম পাঠানো হয়েছে।’’ রাতের খবর, কী ভাবে এত ইভিএম একসঙ্গে খারাপ হল, তা নিয়ে তদন্তের পথে যাচ্ছে কমিশন। সূর্যমণিনগর কেন্দ্রে যেমন বিকালে একসঙ্গে খারাপ হয়েছে ১৮টি বুথের ইভিএম!
আরও পড়ুন: ‘কারসাজি’ বিতর্ক বাড়িয়ে ত্রিপুরায় আড়াইশো বুথে ইভিএম বিভ্রাট
ইভিএম সারানো বা বদলানোয় সময় চলে যাওয়ায় বেশি রাত পর্যন্ত বহু বুথে লম্বা লাইন রয়েছে। রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়়েছে ৭৮.৫৬%। এখনও পর্যন্ত সিপিএম ৫টি এবং বিজেপি ৯টি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে। কমিশন অবশ্য করমছড়়ার একটি বুথেই পুনর্নির্বাচনের আদেশ দিয়েছে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশের মন্তব্য, ‘‘একসঙ্গে এত ইভিএম খারাপ হওয়া কি স্বাভাবিক ব্যাপার?’’ বিজেপি-র বিপ্লববাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘কমিশনের কাছে জেনেছি, ভি ভি প্যাট দেওয়া ইভিএমে ভোট করতে গিয়ে টেকনিক্যাল কারণে সমস্যা হয়েছে। আমরা দাবি করেছি, সব মানুষের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
সকালে বিপ্লববাবুকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। রাতে শাহকে বিপ্লববাবু ও দলের পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর জানিয়েছেন, ইভিএম বিভ্রাট হলেও ৩১-এর ম্যাজিক সংখ্যা পেরিয়ে ক্ষমতায় আসছেন তাঁরাই।