ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। — ফাইল চিত্র।
তিন দিনের সফরে রাশিয়া গেলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকেই ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন, ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পর জয়শঙ্করের মস্কো-যাত্রা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করছে ভারত। দিন কয়েক আগেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল মস্কো ঘুরে এসেছেন। তার পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রীর মস্কো সফরে গেলেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে উদ্যোগী নয়াদিল্লি এবং মস্কো।
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় ভারতের উপর রুষ্ট ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর চোখরাঙানি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে নারাজ ভারত। ডোভাল, জয়শঙ্করের মস্কো সফর, নরেন্দ্র মোদী ও পুতিনের ফোনে কথা, ভারতের উপর শুল্ক আরোপে আমেরিকার সমালোচনা, পুতিনের ভারত আসার সম্ভাবনা— এমন নানা বিষয় গত কয়েক দিনে প্রকাশ্যে এসেছে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুতের ইঙ্গিত। আগামী ২১ অগস্ট রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে জয়শঙ্করের। সেই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরই পুতিনের ফোন পান মোদী। পুতিনকে নিজের ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে মোদী জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনেই ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক আরও মজবুত করার উপর জোর দিয়েছেন। দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারি বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন। সোমবার বিকেলেও পুতিন ফোন করেছিলেন মোদীকে। আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তা বিস্তারিত জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। মোদী জানান, ভারত ধারাবাহিক ভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের সকল প্রচেষ্টাকে ভারত সমর্থন করে বলেও জানিয়েছেন মোদী। শুধু আলাস্কার বৈঠক বা ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, পুতিন এবং মোদীর কথোপোকথনে উঠে এসেছে ভারত-রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রসঙ্গও। অনেকের ধারণা, রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ও উঠতে পারে।
সম্প্রতি ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রথমে শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। পরে তা বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ করে দেয় আমেরিকা। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার কারণেই ভারতের উপর এই শুল্ককোপ, তা-ও গোপন রাখেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রাশিয়া এবং ভারতকে এক বন্ধনীতে রেখে উভয় দেশের অর্থনীতিকেই ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। তবে ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকির পর রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বন্ধ করেনি ভারত। বরং, দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মজবুত করার বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।