অ্যাঞ্জেল চাকমার মৃত্যুতে প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।
উত্তরাখণ্ডে ত্রিপুরার বাসিন্দা অ্যাঞ্জেল চাকমাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এটি কোনও জাতিগত আক্রমণ বা হামলার ঘটনা নয়। এ বার সেই দাবি নাকচ করে দিল নিহত তরুণের পরিবার। পুলিশের বিরুদ্ধে দায়সারা তদন্ত এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অস্বীকার করার অভিযোগও তুললেন তাঁরা।
অ্যাঞ্জেলের কাকা মোমেন চাকমার দাবি, সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অ্যাঞ্জেলের ভাই মাইকেল। তাঁকেও বেধড়ক মারধর করেন অভিযুক্তেরা। অথচ তাঁর বয়ানই অস্বীকার করছে পুলিশ! মোমেন সংবাদমাধ্যম টাইম্স অফ ইন্ডিয়া-কে বলেন, ‘‘মাইকেল শুধু আমাদের পরিবারের সদস্য নয়, ও মামলার মূল অভিযোগকারী। যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন ও সেখানে ছিল। কয়েক মিনিটে ঘটনাটি ঘটে যায়। আপনারা কী ভাবে আশা করেন যে ওই মুহূর্তে ওর গোটা ঘটনার ভিডিয়ো করা উচিত ছিল? একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শোনার পরিবর্তে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই জনসমক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে পুলিশ।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতিরও অভিযোগ তুলেছেন মোমেন।
সোমবার দেহরাদূন পুলিশের এসএসপি অজয় সিংহ জানিয়েছেন, এটি কোনও জাতিগত আক্রমণ বা হামলার ঘটনা নয়। এটা ঠিক যে, আপত্তিকর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একটা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে, যার জেরে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের আক্রমণ করা হচ্ছে। অজয় বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সদস্যেরা ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেহরাদূনে ছিলেন। কিন্তু প্রথমে তারা অভিযোগে জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেনি। এখন তাঁরা বলছেন, এই ঘটনার নেপথ্যে জাতিবিদ্বেষী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু আমরা তদন্তে সে সব কিছুই পাইনি। এখন যদি তাঁরা অভিযোগে অতিরিক্ত তথ্য যোগ করতে চান, তা হলে আমরা নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখব।’’ এসএসপি আরও জানিয়েছেন, ছয় অভিযুক্তের মধ্যে একজন মণিপুরের বাসিন্দা, আর একজন নেপালি। ফলে জাতিগত পরিচয়ের কারণে এই হামলার সম্ভাবনা কম।
ঘটনাটি ঘটে চলতি মাসের শুরুতে। গত ৯ ডিসেম্বর উত্তরাখণ্ডে জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় বেধড়ক মারধর করা হয় ত্রিপুরার বাসিন্দা অ্যাঞ্জেলকে। অ্যাঞ্জেলের ভাই মাইকেলের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত হয় ‘জাত’ তুলে গালিগালাজ করাকে কেন্দ্র করে। অ্যাঞ্জেল ও তাঁর ভাইকে ‘চাইনিজ় মোমো’ বলে কটাক্ষ করেন ছয় যুবক। তখন অ্যাঞ্জেল প্রতিবাদ করে জানান, তাঁরা ত্রিপুরার বাসিন্দা। চিনা নন। সেখান থেকেই কথা কাটাকাটি শুরু। ক্রমে তা হাতাহাতিতে পৌঁছোয়। দুই ভাইকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। কোপানো হয় ছুরি দিয়ে। ১৭ দিন সঙ্কটজনক অবস্থায় লড়াই করার পর ২৬ ডিসেম্বর অ্যাঞ্জেলের মৃত্যু হয়। তাঁর ভাই মাইকেল এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।