— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার এক মাস আগেই নাকি শিশুর শরীরে হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাস (এইচআইভি)-এর সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ঝাড়খণ্ডের হাসপাতালে! এ বার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সরব হলেন আক্রান্ত এক শিশুর মা। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, গাফিলতি ঢাকতে নাকি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের চাইবাসায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল মাসখানেক আগেই। আক্রান্ত শিশুর মায়ের দাবি, সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর সন্তানের এইচআইভি ধরা পড়ে। কিন্তু চাপের মুখে সরকারি ভাবে বিষয়টি ঘোষণা করা হয় ১৮ অক্টোবর— প্রায় এক মাস পর। ওই শিশুর মায়ের কথায়, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের কর্মীরা হঠাৎ তাঁকে জানান যে, তাঁর শিশু এইচআইভি আক্রান্ত। সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হয়। সঙ্গে এ-ও আশ্বাস দেওয়া হয়, ওষুধ খেলেই ‘সুস্থ’ হয়ে উঠবে তাঁর সন্তান। শিশুর মেডিক্যাল রেকর্ড ঘেঁটেও দেখা গিয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে গোপনে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (এআরটি) দেওয়া হচ্ছিল ওই শিশুকে। অর্থাৎ, ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই শিশুটির এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানতেন চিকিৎসকেরা। তা হলে কি বিষয়টি গোপন রাখার উদ্দেশ্যেই এত চেষ্টা? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শিশুর মা বলছেন, ‘‘বিষয়টি জানাজানির পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা আমাদের সঙ্গে অন্য রকম আচরণ করতে শুরু করেন। তাঁরা কেউ আমার সন্তানকে স্পর্শ পর্যন্ত করছিলেন না। অন্যদেরও আমার সন্তানকে স্পর্শ করতে বারণ করা হচ্ছিল। আমি ভিতরে ভিতরে খুবই আঘাত পাচ্ছিলাম। সে কারণেই শুরুতে আমিও এ বিষয়ে কাউকে কিছু জানাতে চাইনি।’’ শিশুর মায়ের আরও দাবি, তিনি আগে কখনও এইচআইভি সম্পর্কে শোনেননি। ফলে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কেও ধারণা ছিল না তাঁর। পরে হাসপাতালেরই একজন তাঁকে জানান, এটি একটি গুরুতর অসুস্থতা। তার পর থেকে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়তে থাকে তাঁর।
মায়ের দাবি, কী ভাবে হঠাৎ তাঁর সন্তান এই ভাইরাসে আক্রান্ত হল, সে সম্পর্কেও তাঁকে কিছুই জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁকে শুধু বলা হয়েছিল, ওষুধ বন্ধ না করতে। যদিও এ বিষয়ে সদ্য বরখাস্ত হওয়া সিভিল সার্জন সুশান্ত মাঝির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বরং এইচআইভি সংক্রমণের প্রথম বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। হাসপাতালের বর্তমান ইনচার্জ সিভিল সার্জন ভারতী মিঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এনএসিও)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, রক্তদানের আগে অবশ্যই বিস্তারিত দাতার ব্যক্তিগত এবং মেডিক্যাল স্ক্রিনিং রেকর্ড নথিভুক্তকরণের পাশাপাশি এইচআইভি-সহ অন্যান্য সংক্রমণযোগ্য ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের দাবি, রক্ত নেওয়ার সময় আদৌ কোনও নথিপত্র যাচাই করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন চাইবাসার ডেপুটি কমিশনার চন্দন কুমার। তিনি জানিয়েছেন, কোনও রকম রেজিস্ট্রেশন কিংবা ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া রক্তদান অসম্ভব। যে হেতু আক্রান্ত শিশুদের পরিজনেরা বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা এবং নিরক্ষর, তাই হয়তো তাঁদের হয়ে হাসপাতালের কর্মীরা ফর্ম পূরণ করে দিয়েছিলেন।
চলতি মাসের মাঝামাঝি ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার চাইবাসায় প্রথম এক শিশুর এইচআইভি সংক্রমণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। পরে জানা যায়, একজন নয়, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ শিশুর দেহে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আর তা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দূষিত রক্ত দেওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বিস্তারিত তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়েছে।