বিমানসেবিকার ব্যাগে পাচার ৩ কোটির ডলার

মধ্যরাতে বিমানে হানা দিয়ে বিমানসেবিকার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হল বিপুল অঙ্কের ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য তিন কোটিরও বেশি! ২৫ বছর বয়সি ওই বিমানসেবিকা দেবশী কুলশ্রেষ্ঠ-কে হাওয়ালায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স (ডিআরআই)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

আদালতের পথে দেবশী। মঙ্গলবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

মধ্যরাতে বিমানে হানা দিয়ে বিমানসেবিকার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হল বিপুল অঙ্কের ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য তিন কোটিরও বেশি! ২৫ বছর বয়সি ওই বিমানসেবিকা দেবশী কুলশ্রেষ্ঠ-কে হাওয়ালায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স (ডিআরআই)।

Advertisement

রবিবার রাত তিনটে নাগাদ দিল্লি থেকে হংকং যাওয়ার কথা ছিল জেট এয়ারওয়েজের বিমানটির। তার আগে বিমান উঠে ডিআরআইয়ের দল দেবশীকে গ্রেফতার করে। যে ব্যক্তির টাকা নিয়ে দেবশী হংকং যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ, সেই অমিত মলহোত্রকেও গ্রেফতার করা হয়। দিল্লিতে অমিতের বাড়িতে হানা দিয়ে ১৬০০ মার্কিন ডলার এবং ৩ লক্ষ টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

হাওয়ালা কর্তা অমিতের সঙ্গে দেবশীর আলাপ মাস ছয়েক আগে একটি উড়ানেই। তদন্তকারীদের দাবি, মোটা টাকার বিনিময়ে বিদেশে ডলার পাঠানোর জন্য দেবশীকে রাজি করিয়ে ফেলেন অমিতই। গত দু’মাসে প্রায় সাত বার এ ভাবে অমিতের কাছ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ ডলার দেবশী হংকংয়ে পৌঁছে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রতি বার এই কাজের জন্য এক লক্ষ টাকা পেতেন দেবশী। নগদ টাকা হংকং গিয়ে সেই টাকার সমপরিমাণ সোনা ভারতে আনার কথা ছিল।

Advertisement

কিন্তু যাত্রীদের মতোই পাইলট ও বিমানসেবিকাদেরও বিমানে ওঠার আগে ব্যাগ তল্লাশি করাতে হয়। তাঁদের প্রত্যেকের দেহ তল্লাশিও হয়। সে ক্ষেত্রে দেবশী কী করে ৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকার ডলার নিয়ে বিমানে উঠে গেলেন? ডিআরআই জানিয়েছে, ডলার ফয়েলে মোড়া ছিল। তল্লাশির সময়ে দেবশী প্রতিবারই বলতেন, ফয়েলে খাবার মোড়া আছে।

এত সহজে মুখের কথায় পার গেলেন কী করে? দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জানিয়েছে, ফয়েলে মোড়া কোনও জিনিস এক্স-রে-তে ধরা পড়ে না। সিআইএসএফ-এর এক অফিসারের কথায়, ‘‘এমনিতেই পাইলট, বিমানসেবিকাদের একটু অন্য চোখে দেখা হয়। দীর্ঘ দিন দেখতে দেখতে মুখ চেনাও হয়ে যায়। ব্যাগে খাবার ও জল নিয়ে বিমানে ওঠার ছাড় দেওয়া রয়েছে তাঁদের।’’ প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে দিল্লি বিমানবন্দরেও তাঁর ব্যাগে ফয়েল মোড়া কিছু সামগ্রী দেখে নিরাপত্তাকর্মী যখন প্রশ্ন করেন, দেবশী তখন জানান, ফয়েলের ভিতরে খাবার আছে।

কিন্তু আইন মোতাবেক অবশ্য নিরাপত্তায় এই গলদ থাকার কথা নয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ফয়েল মোড়া জিনিসই ব্যাগ থেকে বার করে খুলে দেখার কথা। সিআইএসএফ-এর এক কর্তার কথায়, এখন জলীয় বিস্ফোরক বেরিয়ে গিয়েছে। তাই পাইলট ও বিমানসেবিকাদের সঙ্গে জলের বোতল থাকলেও তাঁদের তা খেয়ে দেখিয়ে দেওয়ার কথা। সেটা যে হয়নি, দেবশীর ঘটনাই তার প্রমাণ। এক কর্তার কথায়, ‘‘যে নিরাপত্তারক্ষী বিশ্বাস করে ওই বিমানসেবিকাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁকে এর মাসুল দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে খাবারের জায়গায় ডলার পাওয়া গিয়েছে। মাদকও তো থাকতে পারত!’’ মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনার পরে মুখ চেনার সুবাদে ‘ছাড়’টুকু আর পাবেন না পাইলট ও বিমানসেবিকারা।

দেবশীকে আপাতত দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে দিল্লির আদালত। জেট এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন