গোয়ার নৈশক্লাবের সেই নর্তকী। — ফাইল চিত্র।
গোয়ার বাগা সমুদ্রসৈকতের কাছে আরপোরা গ্রামের নৈশক্লাব ‘বার্চ’। সেই ক্লাবেই অনেক দিন ধরেই নর্তকী হিসাবে কাজ করতেন কাজ়াখস্তানের পেশাদার নৃত্যশিল্পী ক্রিস্টিনা। ওই নৈশক্লাবে যখন অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তখন মঞ্চে ‘শোলে’ ছবির ‘মেহবুবা ও মেহবুবা’ গানে নাচছিলেন তিনি। তখনও জানতেন না, কী এক অনিশ্চয়তা নেমে আসতে চলেছে তাঁর জীবনে। অগ্নিকাণ্ডে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও সেই বিভীষিকা তাড়া করছে ক্রিস্টিনাকে। ভেঙে পড়েছেন মানসিক ভাবে। খাওয়া-ঘুম উধাও। তিনি যেন ‘জীবন্ত লাশ’! কথাগুলো বলতে বলতে কেঁপে উঠছেন তাঁর স্বামী।
ক্রিস্টিনার স্বামী মিখাইল বুকিনি বর্ণনা করেছেন অগ্নিকাণ্ড পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রীর মানসিক অবস্থার কথা। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। বেঁচে গিয়েছিলেন ক্রিস্টিনা। কিন্তু তার পর থেকে এক দিনও রাতে চোখের পাতা এক করতে পারেননি তিনি। তাঁর স্বামীর বক্তব্য, বাড়ি থেকে বার হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ক্রিস্টিনা। ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন। মানসিক চাপে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এই ক’দিনেই পাঁচ কেজি ওজন কমে গিয়েছে ক্রিস্টিনার। মিখাইলের কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী জীবিত অবস্থাতেই মরে গিয়েছেন।’’
অগ্নিকাণ্ডের পর পরই সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, নাচের মাঝে আচমকা হইচই শুরু হয়ে যায়। কী করবেন, প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। নৈশক্লাবের এক কর্মীর তৎপরতায় কোনও মতে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পান তিনি। সে দিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠছেন এক সন্তানের মা ওই যুবতী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অঝোরে কাঁদছিলাম। সারা শরীর কাঁপছিল। আমি যে বেঁচে আছি, এটুকুতেই আমি কৃতজ্ঞ।’’ তবে বেঁচে গেলেও এখনও সেই অগ্নিকাণ্ডের বিভীষিকা তাড়া করছে ক্রিস্টিনাকে! অন্তত এমনটাই দাবি করছেন তাঁর স্বামী।
গান, নাচ, আনন্দ সেই রাতে মুহূর্তে বদলে গিয়েছিল ভয়, আতঙ্ক এবং বিষাদে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে গোয়া পুলিশ। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় ৬০ জনের বেশি মানুষের জবানবন্দি নথিভুক্ত করেছে তারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টিনার কথাও। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই নৈশক্লাবে দুই মালিক সৌরভ এবং গৌরব লুথেরার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেশ ছেড়ে তাইল্যান্ডের ফুকেতে পালিয়ে যান তাঁরা। পরে তাঁদের সেখানে আটক করা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁদের ভারতে ফেরানো হয়নি। আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের ভারতে প্রত্যপর্ণের চেষ্টা চলছে।