বরাক কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সামিল গৌতম রায় অবশ্য নিজস্ব মেজাজেই রয়েছেন। বলে বলে ছক্কা মারার এতদিনের অভ্যাসে এ বারেও দলে তাঁর বিরোধীদের কটাক্ষ, সমালোচনা অনায়াসেই ঝেড়ে ফেলছেন তিনি। একদা তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা সম্প্রতি গৌতম সম্পর্কে কটাক্ষ করে কলাগাছের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। প্রশ্ন ছিল, কাটলিছড়া ছেড়ে গৌতম রায় কাছাড়ের কাটিগড়ায় দাঁড়ালে সাসংদ হিসেবে তিনি তাঁকে সমর্থন করবেন কিনা? উত্তরে সুস্মিতা বলেন, দল যদি কলাগাছকেও দাঁড় করায় তবে তিনি তাঁকেই সমর্থন করবেন। সেই কটাক্ষের জবাব গৌতম দিয়েছেন নিজস্ব ঢঙেই। জানিয়েছেন, ‘‘আমি কলাগাছ হলেও আঁটিকলা-পচাকলা নই। একেবারে ডিঙামানিক। সমালোচকদের মুখের সামনে শিলচরে বঙ্গ ভবন বানালাম। এবার কমিশনারেট করব।’’
এতটাই আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতম রায়। তিনি বরং জোর দিয়ে বলছেন, ‘‘বহু জায়গা থেকে মানুষ আমাকে চাইছে। যেখানে দাঁড়াব, সেখানেই জিতব।’’ বরাকে ব্যাপক হারে কংগ্রেস ছাড়ার ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ও সব এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি এখন যে ভাঙা নৌকো সেটা লোকে বুঝে গিয়েছে। সেখানে কেউ আর ডুবতে যাবে না।’’ আর এআইইউডিএফ-কে তিনি হিসেবের মধ্যেই গণ্য করেন না।
বিজেপি-এআইইউডিএফকে নিয়ে দুশ্চিন্তা চেপে রাখলেও গৌতমবাবু কিন্তু তাঁর ছেলেকে নিয়ে যে সমস্যায় রয়েছেন, তা খোলাখুলিই স্বীকার করেছেন। ছেলে রাহুল রায় এক বার আলগাপুর আসনে জিতেছিলেন। পরের বার হেরে যান। এখন তিনি দাঁড়াতে চান কাটলিছড়ায়। বাবাকে অন্য আসন দেখে নিতে বলেছেন। ছেলের আব্দার মেটাতে গৌতম রায় কাটিগড়ার দিকে হাত বাড়িয়েছেন। কিন্তু এই আসনটি ৩০ বছর ধরে কংগ্রেসের হাতছাড়া। প্রথমে ছিল বিজেপির দখলে। পরে এআইইউডিএফ। এই আসনটি কতটা নিরাপদ, তা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না গৌতমবাবু। পরিস্থিতি যাচাই করছেন। ছেলের আব্দার মেটাতে না হলে কাটলিছড়াই যে তাঁর সব থেকে নিরাপদ আসন গৌতমবাবু তাও অস্বীকার করছেন সাংবাদিকদের কাছে।
কিন্তু ছেলে রাহুল রায়? অনেকটা অভিমান ভরা গলায় তাঁর জবাব, ‘‘পুত্রস্নেহেই আগে আলগাপুরে টিকিট আদায় করে দিয়েছিলাম। জিতিয়েও আনি। কিন্তু সে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এখন কাটলিছড়ায় দাঁড়ালে তার পরাজয় নিশ্চিত।’’ ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়েও গৌতমবাবু যে বিব্রত তাও প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন তিনি। ডেইজি সিংহকে বিয়ের পর রাহুলের প্রথম স্ত্রী সুহানা রায় প্রচার মাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, রাহুলের সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদই হয়নি। যে নথি রাহুল দেখাচ্ছেন, তা জাল। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ আনেন। রাহুল অবশ্য সুহানার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এই বিষয়ে গৌতমবাবু রাহুলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিজের পছন্দে ছেলে বিয়ে করেছে। এখন আবার ছাড়াছাড়ি কেন!’’ তিনি যে ছেলের ভুলের মাশুল
হিসেবে সুহানাকে প্রতি মাসে একলক্ষ টাকা দিচ্ছেন তাও সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে আবার রাহুলের প্রতি গৌতম রায়ের প্রকাশ্য মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁদের কথায়, সঙ্কটের সময় বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বাপ-বেটার ‘লড়াই’ আগেও দেখা গিয়েছে। বাইরের সঙ্কট কেটে যাওয়ার পর তাঁরা আবার স্বাভাবিক হয়ে যান। এই দুর্জনদের বক্তব্য, এটা আসলে মানুষের সহানুভূতি টানার কৌশল।