National News

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উদ্দেশ্য নয়, কাশ্মীর ঘুরে বললেন ইইউ এমপি-রা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জন এমপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দিনভর কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। কথা বলেছেন কিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:০৬
Share:

কাশ্মীরের সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিরা। —ফাইল চিত্র

বুলেটপ্রুফ গাড়িতে কেন্দ্রের নির্ধারিত কর্মসূচি, কাশ্মীরের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-অশান্তির মধ্যে ডাল লেকে শিকারা-বিলাস, বিরোধী সাংসদদের ঢুকতে না দিয়ে বিদেশি প্রতিনিধিদের সাদরে ঘোরানো হচ্ছে— ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাছাই করা সদস্যদের কাশ্মীর ভ্রমণ নিয়ে এমন বহুবিধ প্রশ্ন-বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। তবে বিতর্ক এড়িয়ে প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল থেকে শুরু করে ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ কিংবা সন্ত্রাস শুধু কাশ্মীরের নয়, বিশ্বের সমস্যা— এ সব বলার মধ্যে দিয়ে দেশের শাসক দলের মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে তাঁদের কথায়। যদিও একই সঙ্গে প্রতিনিধি দলের এক জন উস্কে দিয়েছেন বিরোধীদের তোলা প্রশ্ন। তাঁর মতে, ভারতের বিরোধী দলের সাংসদ-প্রতিনিধিদেরও কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া উচিত। যা স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপিকে।

Advertisement

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জন এমপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দিনভর কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। কথা বলেছেন কিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে। ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণের ছবিও মঙ্গলবার ঘোরাফেরা করেছে সংবাদ মাধ্যমে। সেই পরিদর্শন শেষে বুধবার শ্রীনগরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তাঁরা। ওই প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র বলেন, ‘‘ভারতের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং সন্ত্রাস দমনের প্রচেষ্টাকে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের সব সদস্য সমর্থন করি।’’ রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এ কথা বলে কার্যত মোদী সরকারের ৩৭০ ধারা বিলোপকেই সমর্থন করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি কাশ্মীর যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেই বিষয়টিও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

কিন্তু অল্প সময়ের সফরে তাঁরা যে খুব বেশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি, সে কথা জানিয়ে ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য প্রান্তের নাগরিকদের মতো আমরাও ভারতীয় হতে চাই। আমরাও চাই এখানেও দেশের অন্যান্য জায়গার মতোই উন্নয়ন হোক।’’ এ ছাড়া কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ভারত-পাক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন ইইউ প্রতিনিধিরা।

Advertisement

সরকারি ঘেরাটোপের মধ্যে এবং আধিকারিকদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পথেই কাশ্মীর সফর করেছেন বিদেশি প্রতিনিধিরা। কাদের সঙ্গে কথা বলবেন, কোথায় কী ভাবে ঘুরবেন, সে সবও কেন্দ্রই ঠিক করে দিয়েছে বলে নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে শাসক দলের অস্বস্তি ছিলই। মোদী সরকারের সেই অস্বস্তি বাড়িয়েছেন ইইউ এমপি নিকোলাস ফেস্ট। বিরোধী দলের নেতা-সাংসদদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, ‘‘যদি আপনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এমপিদের ঢুকতে দেন, তা হলে ভারতের বিরোধী দলগুলিকেও সেই ছাড়পত্র দেওয়া উচিত। সুতরাং, কিছুটা হলেও অসামঞ্জস্য রয়েছে। বিষয়টি দেখা উচিত সরকারের।’’

তবে তাঁদের উদ্দেশ্য যে ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা নয়, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইইউ এমপিরা। তাঁদের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য আমরা এখানে আসিনি। আমরা শুধু প্রকৃত ঘটনা জানতে এসেছি। এখান থেকে দেশে ফিরে কোনও রিপোর্টও আমরা কাউকে দেব না।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘আমরা সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছি। কিন্তু আমরা কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারতের মধ্যে অন্যতম প্রগতিশীল এলাকা হয়ে উঠতে পারত কাশ্মীর।’’

আরও পড়ুন: পাশে থাকার বার্তা মমতার, কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে অধীর, ফোন স্বরাষ্ট্রসচিবকে

এই প্রতিনিধি দলকে নাৎসিবাদী বলে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) সুপ্রিমো ও সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সেই আক্রমণে যে তাঁরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, সে কথা সরাসরিই বলেছেন ইইউ এমপিরা। ওই মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমরা নাৎসিবাদী নই। সেটা হলে আমরা নির্বাচিত হতাম না। আমাদের নাৎসিপ্রিয় বলায় আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।’’

এসেছিলেন ২৭ জন ইইউ এমপি। তাঁদের অধিকাংশই অতি ডানপন্থী বলেই পরিচিত। শুধু মাত্র তিন জন বাম তথা প্রগতিশীল দলের প্রতিনিধি। কিন্তু এই ২৭ জনের মধ্যেও আবার চার জন কাশ্মীর সফর না করেই দেশে ফিরেছেন। ফিরে যাওয়া চার জনের মধ্যে ক্রিস ডেভিস রীতিমতো মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে দেশে ফিরেছেন। অভিযোগ ছিল, সরকারি ঘেরাটোপে নয়, নিজের মতো করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন বলেই তাঁকে কাশ্মীরে যেতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘মোদী সরকারের জনসংযোগ স্টান্টের অংশ হতে আমি আসিনি এবং এমন ভান করতে পারব না যে, সব ঠিকঠাক চলছে। এটা স্পষ্ট যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভঙ্গ হয়েছে কাশ্মীরে। সারা বিশ্বের বিষয়টিতে নজর দেওয়া দরকার।’’

আরও পডু়ন: হত্যালীলা: কাশ্মীরে জঙ্গি গুলিতে হত ৫ বাঙালি শ্রমিক

আবার এমন অভিযোগও উঠেছে যে বিদ্বৎসমাজ, বণিক মহল এবং কাশ্মীরের একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি দল ইউ ইইউ এমপিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ন্যাশনাল কনফারেন্স দুই সাংসদ অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই এমপিদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আটকে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশিদের খাতির-যত্ন করে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সাংসদদের আটকে দেওয়ার প্রশ্নে তুলে সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। এ বার ইইউ প্রতিনিধিরাও তাতে সায় দেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র অনেকটাই চাপে পড়ল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন