প্রতীকী ছবি।
সকালে শেয়ার বাজারে ‘অকাল দেওয়ালি’ আনা ঘোষণার পরে সন্ধ্যেতেও নিরাশ করলেন না অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গোয়ার মাটিতে জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে ঘোষণা করলেন, দিনে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত হোটেল ভাড়ায় জিএসটি তো গুনতে হবেই না, ১ অক্টোবর থেকে তার বোঝা কমছে তুলনায় দামি হোটেল ঘরেও। ৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় কর ১৮% থেকে কমে হচ্ছে ১২%। আর ভাড়া ৭,৫০০ টাকা ছাড়ালে, ওই হার দাঁড়াবে ১৮%। আগে যা ছিল ২৮%। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কমছে সেখানে কেটারিংয়ে কর। জিএসটি থেকে পুরোপুরি ছাড় পাচ্ছে বাংলা শস্য বিমাও।
মুখ থুবড়ে পড়া গাড়ি শিল্পকে চাঙ্গা করতে পরিষদ কর ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটে কি না, বৈঠকের আগে বিস্তর জল্পনা ছিল। একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল বিস্কুটের মতো সেই সমস্ত পণ্যকে নিয়ে, হালে যাদের বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। তেমনই উল্টো দিকে প্রশ্ন ছিল, এমনিতেই যেখানে জিএসটি সংগ্রহ প্রত্যাশামতো বাড়ছে না, টান পড়ছে রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ জোগানোর ভাঁড়ারে, সেখানে নতুন করে এই সমস্ত শিল্পের জন্য কর ছাঁটাইয়ের ঘোষণা কতটা সম্ভব? দিনের শেষে দেখা গেল,
একমাত্র আপাতত কিছু দিনের জন্য নির্দিষ্ট এক ধরনের যাত্রীগাড়িতে সেস কমানো ছাড়া কর কমানোর পথে হাঁটেনি পরিষদ।
জিএসটি চালুর সময়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ফি বছর রাজস্ব আদায় ১৪% বাড়ত ধরে নিয়ে তার থেকে এই নতুন অপ্রত্যক্ষ কর আদায় যতখানি কম হবে, তা পুষিয়ে দেবে কেন্দ্র। কিন্তু জিএসটি আদায় প্রত্যাশা মাফিক না-হওয়ায় টান পড়তে শুরু করেছে সেই ভাঁড়ারে। তার উপরে ১৫ তম অর্থ কমিশনও নাকি মনে করছে যে, ১৪% বৃদ্ধি ধরে নেওয়া কিছুটা বেশিই। কিন্তু বৈঠক শেষে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন স্পষ্ট জানান, কোনও রাজ্য ওই ১৪% ধরে ক্ষতিপূরণের হিসেব থেকে সরে আসতে রাজি নয়। এমনকি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও ওই মাপকাঠি না-নামানোর পক্ষপাতী। বিশেষত যেখানে অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে কর আদায়ে ভাটা।
তবে তারই মধ্যে পর্যটন শিল্প-সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে জিএসটি-দাওয়াই প্রয়োগ করতে চেয়েছে পরিষদ। যেমন, পালিশ করা তুলনায় কম দামের পাথরে করের হার ৩% থেকে কমে হয়েছে ০.০২৫%। কিছু সুবিধা জুটেছে গয়না রফতানিকারীদের বরাতে। জিএসটি কমেছে হিরে, বাসের বডি তৈরির মতো বিভিন্ন শিল্পে বরাত নেওয়া কাজেও। আবার এই সমস্ত কর ছাঁটাইয়ের ফলে ধাক্কা খাওয়া রাজস্ব আদায়কে সামাল দিতে লাফিয়ে কর বেড়েছে ক্যাফেনযুক্ত পানীয়ে। বসেছে সেসও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, জিএসটি-র হারের সংখ্যা কমিয়ে এক বা দু’য়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব রয়েছে অর্থ কমিশনের তরফ থেকে। আছে পেট্রোপণ্যকে জিএসটির আওতায় নিয়ে আসার ভাবনাও। কিন্তু এই সব নিয়েই তাড়াহুড়োর পক্ষপাতী নয় অধিকাংশ রাজ্য। বরং সবার আগে জিএসটি আদায় বৃদ্ধিতে মসৃণ ছন্দ এবং নিশ্চয়তা দেখার অপেক্ষায় তারা।