Hathras Gang Rape

‘সত্যিটা দেখাতে হাথরসে গিয়েছিল’

স্ত্রীয়ের অভিযোগ,  ‘‘সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই কাপ্পানকে ফাঁসানো হয়েছে। হাথরসে এত জন সাংবাদিক গেলেন, গ্রেফতার করা হল শুধু সংখ্যালঘু সাংবাদিককে।’’

Advertisement

চৈতালি বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৩
Share:

রেহনা ও সিদ্দিক কাপ্পান। —নিজস্ব চিত্র

স্ত্রীকে শেষ বার ফোন করেছিলেন ৪ অক্টোবর রাত ১২টার সময়ে। তার পর থেকেই ফোন বন্ধ সিদ্দিক কাপ্পানের। অনেক বার মেসেজ করেছেন রেহনা সিদ্দিক। পাল্টা ফোন করে চলেছেন রাত আড়াইটে থেকে। কিন্তু যোগাযোগ করা আর সম্ভব হয়নি সাংবাদিক স্বামীর সঙ্গে। ফোন বন্ধ জেনে তবু বার বার চেষ্টা করছেন যোগাযোগের।

Advertisement

সোমবার সংবাদমাধ্যমেই রেহনা জানতে পারেন, উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত পরিবারের খবর করতে যাওয়ার পথে মথুরায় গ্রেফতার হয়েছেন কাপ্পান। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ, বলা হয়েছে, কাপ্পান এবং তাঁর তিন সঙ্গী উগ্রপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই) এবং তার শাখা সংগঠন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া-র সঙ্গে যুক্ত। হাথরসে জাতপাতের লড়াই লাগানোর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ নিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন সাংবাদিকের কেরলের বাড়িতে ফোন করা হল, তা ধরলেন শ্যালিকা জুমেনা মুস্তাক। কথোপকথনে ইংরেজি-মালয়লম অনুবাদকের ভূমিকা নেওয়ার আগে বললেন, ‘‘জানি, কথা বলা জরুরি। আমাদের পরিবারের স্বার্থেই।’’

কাপ্পানের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন রেহনা। বলছেন, ‘‘আমার স্বামী নির্দোষ। ও কখনও অন্যায় করেনি। দেশদ্রোহের অভিযোগ সত্যি নয়। ও শুধু সাংবাদিক হিসাবে সত্যিটুকু দেখাতে হাথরসে গিয়েছিল।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদী কাঁধে হাত দিতেই চোখে জল চিরাগের

রেহনা জানাচ্ছেন, গ্রেফতার হওয়ার রাতে সম্ভবত পুলিশ হেফাজত থেকেই তাঁকে ফোন করেন সিদ্দিক। তখনও স্ত্রীকে কিছু জানাননি কাপ্পান। রেহনা বলেন, ‘‘ও দিল্লিতে মালয়লম সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করছিল। আমায় দু’দিন আগেই বলেছিল, হাথরসে যাবে নির্যাতিতা মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলতে। রাতে ওকে প্রথমে ফোনে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওর ডায়াবিটিস আছে। মনে হচ্ছিল, করোনা হয়েছে কি না। পরে খবর দেখে জানতে পারলাম আসল ঘটনা।’’ স্ত্রীয়ের অভিযোগ, ‘‘সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই কাপ্পানকে ফাঁসানো হয়েছে। হাথরসে এত জন সাংবাদিক গেলেন, গ্রেফতার করা হল শুধু সংখ্যালঘু সাংবাদিককে। এখনও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’’

আরও পড়ুন: ভারতে অনলাইন শিক্ষায় বৈষম্য: এস্থার

বাড়িতে নিয়মিত স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভিড়। তার মধ্যেও প্রত্যেককে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন রেহনা। শাশুড়ির বয়স নব্বই বছর। তাঁকে এখনও জানানো হয়নি, ছেলে গ্রেফতার হয়েছে। ‘ছেলের ফোন কেন আসছে না’-র উত্তরে নিত্যনতুন ব্যাখ্যা খুঁজে বার করছেন বৌমা। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হলেও দুই ছেলে, এক মেয়ের সামনে স্থির থাকতে হচ্ছে। দিল্লি থেকে সাংবাদিকের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন নিয়মিত। ফোনের ও প্রান্ত থেকে বোন জুমেনাও আত্মবিশ্বাসী। ‘‘ভয় পাচ্ছি না। কারণ, ভয় পাওয়ার মতো কোনও অন্যায় জামাইবাবু করেননি। আল্লার উপরে ভরসা রেখেছি। বিচারব্যবস্থায় আস্থা রয়েছে। সত্যি সামনে আসবে।’’

সিদ্দিকের মুক্তির দাবিতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে ‘কেরল ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস’। সংস্থার প্রেসিডেন্ট কে পি রেজি বলছেন, ‘‘উনি আমাদের এই কমিটির দিল্লির সেক্রেটারি। বহু বছর ধরে সিদ্দিকি কাপ্পানকে চিনি। সংবিধান রক্ষার লড়াই ছাড়া ওই সাংবাদিক আর কিছুই করেননি। আমাদের পেশাগত দায়বদ্ধতা রক্ষার জায়গা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। ওঁর মুক্তির দাবিতে কেরলের সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রীকে গণ-ইমেল করব।’’

রেহনাও বলছেন, "দিল্লির সাংবাদিক বন্ধুরাই ওর জন্য আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি দিল্লি যাওয়ার কথা ভাবছি। কেরল সরকারের তরফে এখনও পাশে থাকার আশ্বাস পাইনি। যেহেতু ও এই রাজ্যে থাকে না, দিল্লিতে থাকে, তাই হয়তো সরকারের উদ্যোগ নেই। তবে আমি তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না। ছেলেমেয়েদের কাছে, প্রতি মুহূর্তে শুনতে হচ্ছে, বাবা কবে ফিরবে।’’

আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে স্বামীর ফোনে মেসেজ করে চলেছেন রেহনা ঘণ্টায়, ঘণ্টায়। যদি কোনও উত্তর আসে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন