(বাঁ দিকে) বিএমডব্লিউ-কাণ্ডে ধৃত গগনপ্রীত কৌর। (ডান দিকে) সন্দীপ কৌর ও তাঁর স্বামী অর্থ মন্ত্রকের উপসচিব নভজ্যোত সিংহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দিল্লি বিএমডব্লিউ দুর্ঘটনার তদন্তে নতুন মোড়! পুলিশের দাবি, অর্থ মন্ত্রকের উপসচিব নভজ্যোত সিংহ ও তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌরকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই হাসপাতালটির মালিক অভিযুক্ত গাড়িচালকেরই তুতো ভাই। কিন্তু সঙ্কটজনক দুই রোগীকে কেন এত দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন? পুলিশের প্রশ্নে ৩৮ বছরের যুবতী গগনপ্রীত কৌর জানান, তাঁর মাথা কাজ করছিল না! অন্য দিকে, মৃত নভজ্যোতের পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় দেরি না-হলে হয়তো বাঁচানো যেত রোগীকে।
গত রবিবার রাতে দিল্লির বাংলাসাহিব গুরুদ্বার থেকে বাইকে চেপে ফিরছিলেন নভজ্যোত। বাইকের পিছনের আসনে ছিলেন স্ত্রী। দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের কাছে তাঁদের বাইকে ধাক্কা মারে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন গগনপ্রীত। গাড়িতে তাঁর পাশের আসনে বসেছিলেন স্বামী পরীক্ষিৎ মাক্কড়। ঘটনাক্রমে মারা যান নভজ্যোত। তাঁর স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ গাড়়িচালক গগনপ্রীতকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, প্রায় জোর করেই তিনি আহত দম্পতিকে দূরের হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন।
পুলিশ জানাচ্ছে, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু রক্তাক্ত নভজ্যোত এবং তাঁর স্ত্রী সন্দীপকে নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ কিলোমিটার দূরে জিটিবি নগরের একটি হাসপাতালে। বিএমডব্লিউ-র চালক গগনপ্রীতের কথামতোই এক ট্যাক্সিচালক আহতদের সেখানে নিয়ে যান বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু এত দূরের হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হল? জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালের মালিকানা ধৃতের এক ভাইয়ের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় গগনপ্রীত জানান, দুর্ঘটনার পর তাঁর মাথায় কিছু আসছিল না। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রথমেই তাঁর মাথায় আসে ভাইয়ের হাসপাতালের কথা। কারণ, করোনার সময় সেখানে তাঁর সন্তানদের ভর্তি করিয়েছিলেন। পরিষেবা ভাল পেয়েছেন।
অন্য দিকে, জখম সন্দীপ পুলিশকে জানিয়েছেন, রক্তাক্ত অবস্থাতেও তিনি বার বার ওই গাড়িচালককে অনুরোধ করেছিলেন তাঁদের কাছেপিঠের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাঁর স্বামীর শারীরিক অবস্থা তখন অত্যন্ত খারাপ। রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের একপ্রকার জোর করে নিজের পছন্দের হাসপাতালে পাঠান গগনপ্রীত। একে ইচ্ছাকৃত বলে দাবি করেছেন তিনি। এফআইআরেও সন্দীপ অভিযোগ করেছেন, বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। চিকিৎসায় দেরি হওয়ার কারণে স্বামী মারা যান। তাঁর শারীরিক অবস্থাও ওই কারণে খারাপ হয়। মহিলার অভিযোগ, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে অনেক দূরে একটি ছোট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের। আমাদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার অনেক পরে আমি জানতে পারি কোথায় রয়েছি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, দীর্ঘ ক্ষণ হাসপাতালে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। অনেক পরে চিকিৎসা শুরু হয়।
সোমবার থেকে দু’দিনের জন্য হেফাজতে রয়েছেন গগনপ্রীত। তাঁর স্বামীকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি গগনপ্রীতের বাপের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানে খোঁজখবর করতে গিয়ে হাসপাতালের মালিকানার বিষয়টি জানা যায়। গগনপ্রীতের স্বামী জানান, দুর্ঘটনার পরে শ্বশুরকে ফোন করেন তিনি। সংক্ষেপে পুরো ঘটনার কথা জানিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান।