Coronavirus

পিপিই-মাস্কের চাহিদা মিটিয়ে আশা রফতানির

আগে ভারতে বছরে পিপিই তৈরি হত মাত্র ৪৭ হাজার।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৪:০২
Share:

ছবি রয়টার্স

কোভিড-১৯ অতিমারির বিপদকেই সুযোগে পরিণত করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ওষুধ, মাস্ক ও চিকিৎসা-সরঞ্জাম তৈরিতে স্বাবলম্বী হওয়ার সঙ্গেই এ সবের বিশ্ব বাজার ধরতে তৎপর এখন ভারত। আর্থিক দিশা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার ডাক দিয়েছেন চলতি মাসের ১৩ তারিখ। পরের দিনই দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস দফতর জানায়, কার্যত শূন্য থেকে শুরু করে দেশীয় সংস্থাগুলি তিন মাসে দেশের মাস্ক ও পিপিই-র চাহিদার অনেকটাই মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

Advertisement

আগে ভারতে বছরে পিপিই তৈরি হত মাত্র ৪৭ হাজার। এখন দিনে তৈরি হচ্ছে ২ লক্ষ। সরকারের দাবি, পিপিই উৎপাদনে ভারত এখন চিনের পরেই। মাত্র দু’মাসে ভারত বিশ্বে দু’নম্বর দেশ হয়ে উঠেছে এই ক্ষেত্রে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিশ্বের আংশিক চাহিদা পূরণ করতেও সক্ষম হবে ভারত।

মাস্ক, পিপিই কিটের প্রশ্নে ভারত কী ভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠেছে, আত্মনির্ভরতারর ডাক দেওয়া সময়েই তার উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, জানুয়ারি মাসের শেষে ভারতে যখন প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে, সে সময়ে ভারতে একটিও এন-৯৫ মাস্ক তৈরি হত না। কারণ এ দেশে মাস্কের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়ই তৈরি হত না। তাই শুরুতেই কাপড়ের প্রশ্নে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে ভারত। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও-র গবেষণায় দেশেই মাস্কের কাপড় বানাতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। মে মাসের মাঝামাঝিই দেশে প্রতি দিন গড়ে প্রায় আড়াই লক্ষের কাছাকাছি মাস্ক তৈরি হচ্ছে বলে জানায় ফার্মাসিউটিক্যালস দফতর।

Advertisement

একই চিত্র চিকিৎসাকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই কিটের ক্ষেত্রেও। কেন্দ্রের হিসেব বলছে, দেশের চিকিৎসাকর্মীদের জন্য দু’কোটি পিপিই কিটের প্রয়োজন। যার মধ্যে ১.৪২ কোটি কিট তৈরি হবে ভারতে। পিপিই তৈরির প্রশ্নেও ভারত করোনার ধাক্কায় আজ স্বাবলম্বী হওয়ার পথে বলে দাবি করেছেন ফার্মা সচিব পি ডি বাঘেলা। তিনি জানান, করোনা-পর্বের আগে ভারতে খুব অল্প সংখ্যক পিপিই কিট বানানো হত। দেশে নোভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে একটি-দু’টি করে সংস্থা এগিয়ে আসে। গত ৩০ মার্চ, গোটা দেশে দিনে ৩৩১২টি কিট তৈরি হচ্ছিল। ঠিক এক মাসের মাথায় অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল দেশের দৈনিক পিপিই কিট উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় ১.৮৬ লক্ষে। এক মাসে এতটা বৃদ্ধি বুঝিয়ে দিয়েছে দেশীয় সংস্থাগুলি চাইলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা থেকে এখন প্রায় ১২৫টির কাছাকাছি দেশীয় সংস্থা এই মুহূর্তে পিপিই কিট বানানোয় হাত লাগিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঘেলা। ছাড়পত্র্রের অপেক্ষায় রয়েছে আরও অনেকগুলি সংস্থা। বাঘেলার দাবি, মাস্ক-পিপিইর চাহিদা আগামী দিনে থাকবেই। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই দেশীয় সংস্থাগুলি ভারতের চাহিদা মিটিয়ে পিপিই কিট রফতানি করতেও সক্ষম হবে।

কেবল মাস্ক বা পিপিই নয়, ভেন্টিলেটরের মতো উন্নত প্রযুক্তির মেশিন বানানোর প্রশ্নেও এগিয়ে এসেছে ভারতীয় সংস্থাগুলি। করোনা রোগীর বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে দেশে আগামী দিনে ৭৫ হাজার ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ৬০,৮৮৪টির বরাত দিয়েছে। যার মধ্যে ৫৯ হাজার ভেন্টিলেটরই তৈরি করছে দেশীয় সংস্থা। কেবল এক হাজার ভেন্টিলেটর বিদেশ থেকে আনা হবে। দেশীয় প্রযুক্তিতে ভেন্টিলেটর বানাতে এগিয়ে এসেছে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (৩০ হাজার), মারুতি সুজুকি (১০ হাজার) এবং এএমটিজেড (১৩,৫০০) মতো সাতটি সংস্থা। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধের প্রসঙ্গে বাঘেলা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে উৎপাদন ক্ষমতা ১২.২৩ কোটি থেকে বেড়ে ৩০ কোটি হয়েছে। যার ফলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য দেশকে ওই ওষুধ দিয়ে সাহায্য করতে পারছে ভারত।

আরও পড়ুন: অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সফরে কী করবেন, কী করবেন না, ফের গাইডলাইন দিল কেন্দ্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন