মন্ত্রী বলেই বদ্ধ নন শুধু নিজের আসনে

তখনও ধলাই আসনের গণনা শেষ হয়নি। গণনার প্রবণতা ও গতিপ্রকৃতি দেখে সকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়, রাজ্যে পালাবদল নিশ্চিত। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, এ বার পরিমল শুক্লবৈদ্যর মন্ত্রিত্ব নিশ্চিত। এমনকী ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী শিলচরের দিলীপ পালও একই কথা শোনান।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

তখনও ধলাই আসনের গণনা শেষ হয়নি। গণনার প্রবণতা ও গতিপ্রকৃতি দেখে সকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়, রাজ্যে পালাবদল নিশ্চিত। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, এ বার পরিমল শুক্লবৈদ্যর মন্ত্রিত্ব নিশ্চিত। এমনকী ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী শিলচরের দিলীপ পালও একই কথা শোনান। তখন কিন্তু একজন ব্যক্তিই ভিন্ন সুরে কথা বলেছিলেন, ‘‘কত প্রবীণ বা ক’বারের বিধায়ক, ও সব দেখে বিজেপিতে মন্ত্রিত্ব স্থির হয় না।’’ তিনি পরিমল শুক্লবৈদ্য। ঘনিষ্ঠজনেরা উচ্ছ্বাসে আহ্লাদিত হলেও তিনি ছিলেন নির্বিকার—সুখে-দুঃখে বিগত স্পৃহ।

Advertisement

মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পরেও ওই একই রকম। কিন্তু দফতর বণ্টনের পর আর নির্বিকার থাকা সম্ভব হয়নি। যে দফতর পাওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকেন, সেই পূর্ত দফতরের মন্ত্রী করা হয় পরিমলবাবুকে। সঙ্গে আবগারি ও মৎস্য।

কিন্তু খোদ বরাক উপত্যকার বেহাল রাস্তাঘাটই পূর্তমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ এই রাস্তার আশাতেই কাছাড়-করিমগঞ্জের মানুষ বিজেপিকে জয়ী করেছেন। তাই প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে হয়, এখনও যেন কিছুই হচ্ছে না! সন্দেহ হয়, পরিমলবাবু বোধ হয় পেরে উঠছেন না। আদালতের হলফনামা ও বিধানসভার প্রশ্নোত্তরে তাঁর সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

Advertisement

প্রথমবার মন্ত্রী হয়েই পূর্ত দফতর পাওয়া যেমন বিরাট সম্মানের, তেমনই এত দ্রুত কারও কাজকর্ম নিয়ে কৈফিয়ৎ আদায়, এত পর্যালোচনা, তাও ওই পূর্ত দফতর বলেই। এ নিয়ে তিনি অস্বস্তিতে রয়েছেন, মানতে নারাজ পরিমলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বিভাগীয় হিসেব এক জিনিস, আর রাস্তাঘাটের হালহকিকত আলাদা কথা। ৮২ শতাংশ বা ৮৭ শতাংশ ভাল মানে এই নয় যে, রাস্তাঘাট নিয়ে বরাকের মানুষ খুব স্বস্তিতে। সামান্য খারাপের জন্যও যদি ভাল অংশের উপকার টের পাওয়া না যায়, তাতে যে ভাল-খারাপ একই কথা, সেটা আমি বুঝি।’’ রাস্তা নিয়ে তাঁর মতো ভোগান্তির অভিজ্ঞতা খুব কম মানুষেরই রয়েছে বলে দাবি করে চার বারের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘আইরংমারার বাড়ি থেকে প্রতিদিন শিলচর শহরে আসতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে-পরে সড়কের চিহ্নমাত্র ছিল না। আবার ধলাই, ভাগা প্রভৃতি অঞ্চলে সভা করতে প্রতিনিয়ত যেতে হয়েছে আমাকেই। সুতরাং আমি জানি।’’

রাস্তার হাল ফেরাতে নিজের তৎপরতার কথা জোর দিয়েই তিনি উল্লেখ করেন। তবে তার জন্য তিনি আরও কিছুদিন সময় চেয়ে নিয়েছেন। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের অধিকাংশ জায়গায় কাজ চলছে। বাকি জায়গায়ও শীঘ্র কাজ শুরু হবে। তবে ভাল ভাবে রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। একই ভাবে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্য ঠিকাদারকে কাজের দায়িত্ব দিতে গেলেও সময় চাই। তিনি আশাবাদী, সাময়িক নানা চর্চা হলেও মানুষ আমাকে ভুল বুঝবেন না।’’

পূর্ত দফতরের প্রচণ্ড চাপে কি আবগারি বা মৎস্য দফতর অবহেলার শিকার হচ্ছে না? পরিমলবাবুর কথায়, ‘‘আবগারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দফতর। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের রাজস্ব ও অর্থনীতির সম্পর্ক। আর মৎস্য দফতর আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভাল লাগার জায়গা।’’ নিজের ‘ফিসারি’ থাকার কথা উল্লেখ করে পরিমলবাবু জানান, এই দফতরটিকে নিজের মতো করেই সাজাতে চাইছি আমি।’’ কিন্তু বিভাগ সাজাতে গিয়ে এলাকার দিকে কি নজর কমে যাচ্ছে না? পরিমলবাবুর জবাব, আগের মত এলাকায় ২৪ ঘণ্টা সময় দিতে পারেন না ঠিক, কিন্তু সারাক্ষণ সকলের খবর রাখেন। বিধায়ক কাছে নেই বলে এলাকাবাসীর যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য সমস্ত ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছে। তিনি জানান, ‘‘মন্ত্রী বলেই নিজের এলাকার জন্য সব কিছু ঢেলে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার এও সত্য, মন্ত্রী বলে এলাকার জন্য কাজের কিছু বিশেষ সুযোগও মেলে।’’ দুইয়ের মধ্য দিয়ে চলে ধলাইয়ের জন্য কতটা উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়, সেটাই আপাতত তাঁর লক্ষ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে রাস্তাঘাট, কৃষি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছেন বলে জানান পরিমলবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন