—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা কত? তার স্পষ্ট কোনও জবাব দিতে পারল না কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক। এমনটাই দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। শুক্রবার রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তরপর্বে দেশের অসংগঠিত শ্রমিক এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রশ্ন করেন ওই তৃণমূল সাংসদ। শেষ পাঁচ বছরে রাজ্যভিত্তিক কোন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কোন কোন রাজ্যে কত সংখ্যায় কর্মরত রয়েছেন? এই একই সময়কালে কত সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক নিজের কর্মস্থলে মারা গিয়েছেন এবং ভিন্রাজ্যে মারা যাওয়া শ্রমিকদের যাবতীয় তথ্য সংসদে জানানোর দাবি করেন তিনি।
জবাবে শ্রম মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শোভা কারান্দালাজে জানান, দেশের অসংগঠিত শ্রমিকদের যাবতীয় তথ্য পেতে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রক ই-শ্রম পোর্টাল চালু করেছিল। সব রাজ্যকে তাদের অসংগঠিত শ্রমিকদের তথ্য সেই পোর্টালে আপলোড করতে বলা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে ৩০ কোটি ৯৪ লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিক রয়েছেন। পাশাপাশি, ভিন্রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য দেশে কী কী আইন রয়েছে, সঙ্গে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার সেই আইন মারফৎ পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার কোন কোন বন্দোবস্ত করতে পারে, তারও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে তিনি কোনও তথ্য দিতে পারেননি বলে সামিরুলের দাবি।
এমন জবাবে অসন্তুষ্ট সাংসদ সামিরুল বলেন, ‘‘আমি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের কাছে। যদি আপনারা প্রশ্নোত্তরগুলি ভাল করে দেখেন, তা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে সরকারের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও সময়োপযোগী বা নির্ভরযোগ্য তথ্যই নেই। তারা জানেই না কত জন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন গত পাঁচ বছরে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরের তথ্য চেয়েছিলাম। আর আমরা সকলেই জানি কী ভাবে কোভিডের কারণে দেশ জুড়ে লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হতে হয়েছিল। আর সেই পথে কত মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছিলাম। কোনও তথ্য নেই, না কি বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইছে? তথ্য গোপন করে তারা কি এই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তাই সেই তথ্য লুকোতে চাইছে?’’
তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, ‘‘এখন বাংলা ভাষায় কথা বলা শ্রমিকেরা, যাঁরা বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করছেন, তাদের অবৈধ ভাবে আটক করা হচ্ছে। ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও দিল্লির মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের বাংলার মানুষদের। তাঁদের মধ্যে অনেককে বাংলাদেশেও পাঠানো হয়েছে। এই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কোনও তথ্যই দিচ্ছে না।’’
ঘটনাচক্রে, শনিবার হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিংহ সৈনি আবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অনুপ্রবেশ ইস্যু’তে আক্রমণ করেছেন। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘হরিয়ানায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কোনও জায়গা নেই, তাদের দ্রুত রাজ্য থেকে বার করে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের নিরাপত্তায় ফাটল ধরানো ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, যা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, জাতীয় স্বার্থবিরুদ্ধও। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় যে এক জন মুখ্যমন্ত্রী তুষ্টিকরণ ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে এতটা নীচে নেমে যান যে, দেশের নিরাপত্তার সঙ্গেও আপস করতে প্রস্তুত থাকেন। ভারতের ঐক্য, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে কোনও রকম আপস হরিয়ানা কিংবা দেশের কোথাওই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের কাছে দেশের স্বার্থই সর্বোচ্চ, এবং চিরকাল তা-ই থাকবে।’
জবাবে তৃণমূল সাংসদ সামিরুল পাল্টা এক্স হ্যান্ডলে জবাবে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাবে আপনি যুক্তিহীন ভাবে আক্রমণ করছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক— বিশেষ করে যখন আপনিই বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অবৈধ হয়রানি ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। প্রথম দিন থেকেই আমরা বলে আসছি, প্রকৃত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশি তকমার নামে যে ভাবে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি— যার মধ্যে আপনার রাজ্যও রয়েছে, সেখানে আমাদের ভাইবোনদের অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের উপর ঘটে চলা এই নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আপনি এর দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন।’