(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতের পণ্যে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা গত ২৭ অগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। চড়া শুল্কের কারণে আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতে পারছেন না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তবে কুছ পরোয়া নেহি! এশিয়া এবং ইউরোপের একাধিক দেশকে বিকল্প হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ওই সমস্ত দেশে সংশ্লিষ্ট পণ্যের রফতানি তো বেড়েইছে, সেই সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রেও সার্বিক ভাবেও বাণিজ্য বেড়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কিছুটা সামলে নেওয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকায় ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে গয়নাগাটি এবং মূল্যবান পাথর রফতানি করা হত। ট্রাম্পের ঘোষণার পর সেই বাজার ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে আমেরিকার পরিবর্তে এখন ওই পণ্য রফতানি করা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, হংকং, বেলজিয়ামের মতো দেশে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের গয়নাগাটি এবং মূল্যবান পাথর আমেরিকায় রফতানি এক ধাক্কায় ৭৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। পরিবর্তে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ৭৯ শতাংশ, হংকঙে ১১ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে ৮ শতাংশ বেড়েছে রফতানি। গাড়ির সরঞ্জাম রফতানি আমেরিকার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ কমলেও বেড়েছে জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমরিশাহি এবং তাইল্যান্ডে। এর ফলে সার্বিক ভাবে গাড়ির সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক রফতানি আট শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় গয়নাগাটি ও পাথরের রফতানি অবশ্য কমেছে। তবে তা সামান্য, মাত্র ১.৫ শতাংশ। অচিরেই এই ঘাটতি মিটে যাবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
সামুদ্রিক পণ্যের রফতানি সেপ্টেম্বরে ২৫ শতাংশ এবং অক্টোবরে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পণ্য আমেরিকার পরিবর্তে গিয়েছে চিন (৬০ শতাংশ বৃদ্ধি), জাপান (৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি), তাইল্যান্ড (৭০ শতাংশ বৃদ্ধি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে।
তবে কিছু কিছু পণ্যে আমেরিকার চড়া শুল্কের প্রভাব পড়েছে। সুতির পোশাক, খেলাধূলার সামগ্রী, কার্পেট, চামড়ার জুতো প্রভৃতি যে সমস্ত পণ্য শ্রমভিত্তিক, সেগুলির ক্ষেত্রে ভারতের বাজারের সঙ্গে চিন ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের বাজারের প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই এই সমস্ত পণ্যের রফতানিতে আমেরিকার বিকল্প খুঁজতে সমস্যা হচ্ছে। আমেরিকার সঙ্গে যদি ভারতের দ্রুত বাণিজ্য সমঝোতা না-হয়, তবে এই ক্ষেত্রগুলি আরও ধাক্কা খেতে পারে।
রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা খানিক বৃদ্ধি পেলে আবার তিনি সুর নরম করেন। তবে শুল্ক এখনও হ্রাস করেননি। ভারতও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যনীতি পরিবর্তন করেনি। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে।