বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে শিশুমেলা। ছবি: স্বপন রায়।
শিশুমেলা, সাহিত্য বাসর, বিশেষ বক্তৃতায় আজও সরগরম শিলচর শহর। বঙ্গ ভবনে যেমন নানা আলোচনা-অনুষ্ঠান চলছে, তেমনই লোকসংস্কৃতির আসর বসছে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে। একই সময়ে দু-তিন জায়গায় বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে, কিন্তু কোথাওই ভিড়ের খামতি নেই।
বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ২৬-তম কেন্দ্রীয় অধিবেশনে এসে বিস্মিত ভিন রাজ্যের অতিথিরাও। আজ দ্বিতীয় দিনে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ভাষার সংকট নিয়ে দিনভর আলোচনা চলে। সন্ধ্যায় পরমানন্দ সরস্বতীর জন্মশতবর্ষ ও শ্রীভূমি পত্রিকার শতবর্ষ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলল। এই ধরনের আলোচনা সভাতেও দেখা গেল আগ্রহী সাধারণ মানুষজনকেও।
এ দৃ্শ্য বাংলা কথা সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্রের মনে অখণ্ড বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আশা জাগায়। তিনি বলেন, “আগে এক সঙ্গে থাকলেও বাঙালিরা এখন বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকা-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন। একে আয়না ভেঙে আটখান আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “ভাঙা আয়না জোড়া দেওয়া কতটা সম্ভব জানি না, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে না-হলেও, সাংস্কৃতিক দিক থেকে যে সেটা সম্ভব তা এখানে এসে বুঝতে পারছি।” উত্তর-পূর্বের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে এক আলোচনা-সভায় বক্তব্য রাখছিলেন ভগীরথবাবু। তিনি ‘অখণ্ড বাংলা সাহিত্য’-এর জন্য তাঁর আর্তির কথা জানান।
আজ সকালে এই আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে আক্ষেপ করি। কিন্তু শুধু বাংলাই বিপন্ন নয়। বহু ভাষা-সংস্কৃতিই আজ বিপদের মুখে। এ জন্য দায়ী বিশ্বায়ন।” তাঁর কথায়, “আসলে আর্থ-সামাজিক কাঠামো যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, পরোক্ষে হলেও সংস্কৃতিও তাঁদেরই নিয়ন্ত্রণে।” উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমরা কেউ পরিকল্পিত ভাবে পয়লা বৈশাখের বদলে ইংরেজি নববর্ষ নিয়ে মাতমাতি করছি না, পৌষ সংক্রান্তি ভুলে ভ্যালেন্টাইনস ডে করছি না। কেউ চাপিয়েও দেয়নি, তবু তা ক্রমশ চেপে বসেছে, বসছে।”
এ ব্যাপারে সমাধানের কথায় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদের দাবির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “সব কিছুর মূলে বিশ্বায়ন, জেনে বুঝেও আমাদের কিছু করার নেই। স্বশাসিত পরিষদ হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মিলবে, তখন ওই চক্রান্ত ঠেকানো যেতে পারে।” আজকের আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের তিন শিক্ষক-গবেষকও। তাঁরা হলেন--জফির সেতু, মহম্মদ মাসুদ পারভেজ ও আজিরউদ্দিন। ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেলা দাস ও অলক সেনও।
অন্য দিকে লোকমঞ্চে আজ ছিল ঠাট্কীর্তন, হোলি গান, গাজির গান, সারি গান, ফকিরি গান, পুষ্পদোল, ধামাইল, ওঝার গান-সহ বিভিন্ন ধরনের লোক সঙ্গীত। অবাঙালি লোক শিল্পীরা বিভিন্ন সংস্থাও তাঁদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। কাল সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশন। সাহিত্যিকদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবও। সন্ধ্যায় রয়েছে শ্রীহট্ট শিল্পী দলের ব্যালে। একই সময়ে লোকমঞ্চে হবে কাছাড় পুলিশ দলের যাত্রাপালাও।