বিচারপতি যশবন্ত বর্মা। — ফাইল চিত্র।
আরও এক ধাপ এগোল নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া! সোমবার শাসক ও বিরোধী দলের মোট ২০০ জন সাংসদ অভিযুক্ত বিচারপতির ইমপিচমেন্ট শুরু করার আবেদনে সায় দিয়েছেন। ফলে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে বিচারপতিকে অপসারণের পথে হাঁটল কেন্দ্র।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন। জানা গিয়েছে, সেখানে ১৪৫ জন সাংসদ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে বিচারপতির অপসারণ সংক্রান্ত স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া, রাজ্যসভার ৬৩ জন সাংসদও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি, তেলুগু দেশম পার্টি, জেডি (ইউ) এবং জেডি (এস)-সহ এনডিএ জোটের সাংসদেরাও। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, কেসি বেণুগোপাল, এনসিপি (শরদ)-এর সুপ্রিয়া সুলে প্রমুখ। এর পর সংবিধানের ১২৪, ২১৭ এবং ২১৮ অনুচ্ছেদের অধীনে অভিযুক্ত বিচারপতির ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা।
এর আগে নগদকাণ্ডে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বর্মার ইমপিচমেন্টের বিষয়ে সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি।
ইমপিচমেন্ট কী? ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) এবং ২১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে সংসদের উচ্চ কক্ষ তথা রাজ্যসভায় কমপক্ষে ৫০ জন সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন। আর লোকসভায় প্রয়োজন ১০০ জনের স্বাক্ষর। যদি প্রস্তাবটি উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাশ হয়, তা হলে পরবর্তী ধাপ হিসাবে লোকসভার স্পিকার অথবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ করবেন। কমিটিতে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের এক জন বর্তমান বিচারপতি, হাই কোর্টের এক প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মনোনীত কোনও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। সেই কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে সরকার।
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথমে ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মে মাসে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের দিন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের ভিতরে রাশি রাশি টাকার স্তূপ দেখেছিলেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও। যদিও বিচারপতির দাবি, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না।
(প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রথম। তথ্যটি ঠিক নয়। অতীতেও এমন ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া চলেছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী)