(বাঁ দিকে) তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে বাস্তবসম্মত সম্পর্ক চায় ভারত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ বার তা স্পষ্ট করে দিল নয়াদিল্লি। তালিবানের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি যে বদলাবে না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় দূতেরা। সাম্প্রতিক সময়ে তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করতে শুরু করেছে ভারত। আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সম্প্রতি ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছেন। এ অবস্থায় ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বুধবার বক্তৃতা করেন ভারতীয় দূত পর্বতনেনি হরিশ। সেই বক্তৃতার সময়েই আফগানিস্তানের তালিবান সরকার প্রসঙ্গে অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। ভারতের বক্তব্য, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলিকে এমন একটি নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা আফগান জনতার সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। শুধুমাত্র শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে থাকলে পরিস্থিতি যেমন ছিল, তেমনই থাকবে বলে মনে করছে দিল্লি।
নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনাসভায় ভারতীয় দূত বলেন, “তালিবানের সঙ্গে একটি বাস্তবসম্মত সম্পর্ক তৈরির জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে ভারত। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ইতিবাচক পদক্ষেপে সাহায্য করবে। শুধুমাত্র শাস্তিমূলক আচরণের উপর জোর দিলে পরিস্থিতি যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। যেমনটা আমরা গত সাড়ে চার বছর ধরে দেখে আসছি।”
আফগান জনতার জন্য উন্নয়নমূলক কাজকর্মের প্রতিও যে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। কাবুলে অবস্থিত ভারতের কূটনৈতিক দফতরকে পুনরায় দূতাবাসের রূপ দেওয়ার জন্য দিল্লির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন ভারতীয় দূত। তাঁর বক্তব্য, নয়াদিল্লি যে আফগান জনতার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এই সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।
২০২১ সালে তালিবান গোষ্ঠী দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এর আগে প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে আগে বিভিন্ন বিনিয়োগ করেছে নয়াদিল্লি। ওই দুই দশকে আফগানিস্তানে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয় সে দেশে। তবে ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরে সাবধানি পদক্ষেপ করে ভারত। কাবুল যে দূতাবাস ছিল, সেখান থেকে কূটনীতিক এবং আধিকারিকদের সরিয়ে নেয় দিল্লি। তবে গত কয়েক মাস ধরেই ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে ফের কূটনৈতিক স্তরে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে তালিবান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি ছ’দিনের সফরে ভারত আসেন। তালিবান দ্বিতীয় বার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম সে দেশের কোনও মন্ত্রী ভারত সফরে আসেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।