India-China

সামরিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চিনকে পিছু হটানোর চেষ্টায় ভারত

গালওয়ান উপত্যকায় রক্তপাতের পরে প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করে আজই চিনকে ‘কড়া’ বার্তা দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৪:২৪
Share:

ছবি এপি।

ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, ঘাঁটি গেড়ে ভারতীয় সেনাদের হত্যা করেছে চিন। এর পর সামরিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চিনকে পিছু হটানোর চেষ্টা শুরু করেছে সাউথ ব্লক। প্রসঙ্গত, ফ্রেট করিডর প্রকল্পে চিনা সংস্থার ৪৭১ কোটি টাকার বরাত আজই বাতিল করেছে ভারতীয় রেল। গতকালই টেলিকম মন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, বিএসএনএলের ৪-জি সংযোগ চালু করতে একটিও চিনা যন্ত্রাংশ যেন ব্যবহার করা না হয়।

Advertisement

গালওয়ান উপত্যকায় রক্তপাতের পরে প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করে আজই চিনকে ‘কড়া’ বার্তা দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তিনি জানান, ৬ জুন দু’দেশের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া থেকে সরে গিয়ে চিন যে ভূখণ্ডের দাবি করছে, তা ধোপে টিকবে না। অনুরাগ বলেন, “চিন দ্বিপাক্ষিক ঐকমত্য থেকে সরে গিয়ে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গালওয়ান উপত্যকার স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করেছে। তাদের পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপে হিংসা ছড়িয়েছে এবং সীমান্তের দু’পারে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’’

গত রাতে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীর ফোনালাপ নিয়ে অনুরাগের বক্তব্য, “বিদেশমন্ত্রী চিনকে জানান, তারা অবিলম্বে সংশোধনী পদক্ষেপ করুক। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা যেন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয়। একতরফা এমন কিছু যেন না-করা হয়, যাতে স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হয়। গত ৬ জুন যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা মেনে নিয়ে সেনা পিছোনোর বিষয়টি বাস্তবায়িত করা হোক।’’ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চিনের বিদেশমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে সেনা না সরালে তার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘সমস্ত ক্ষেত্রেই’ পড়বে।

Advertisement

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনের বৈঠকও নিষ্ফল, লাদাখে জোর বাড়াচ্ছে চিন

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভারত মূলত দু’টি স্তরে, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে চিনের মোকাবিলা করতে তৎপর। প্রথম স্তরটিতে অবশ্যই রয়েছে সীমান্তে সেনা বাড়িয়ে লাল ফৌজের মোকাবিলা করে, তাদের ফেরত পাঠিয়ে, মে মাসের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। কাজটা যে সহজ নয়, তা অবশ্য ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হল কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে চিনকে চাপে রাখার চেষ্টা করা।

বিজেপি নেতা রাম মাধব আজ বলেছেন, “কৌটিল্য বলেছিলেন, অন্য রাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে ভোঁতা করে দিতে প্রয়োজন জোরদার জাতীয় শক্তি। চিনের সঙ্গে শান্তি চাইছি, কিন্তু সেটা শ্মশানের শান্তি নয়।’’ সূত্রের বক্তব্য, এই ‘জাতীয় শক্তি’ জাগিয়ে তোলার প্রাথমিক ধাপ বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিতে চিনের সঙ্গে চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক লেনদেনের বিষয় খতিয়ে দেখা। যেগুলিতে ভারত উপকৃত হচ্ছে না, সেগুলি বাতিল করার কথা ভাবা হতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপে বেজিংকে কতটা কোণঠাসা করা যাবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন: মনে হচ্ছে সামরিক জবাবই দেবে দিল্লি, অপেক্ষা পাহাড়ে খাপ খাইয়ে নেওয়ার

পাশাপাশি আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আর বাড়িয়ে চিন-বিরোধী চতুর্দেশীয় অক্ষকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলার ভাবনা রয়েছে নয়াদিল্লির। আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানো এবং বিশ্বে যেখানে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে, সেখানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগ করে চিনের ভারতকে ঘিরে ফেলার পাল্টা কৌশল তৈরি করতে চায় নয়াদিল্লি। তিব্বত নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছে সাউথ ব্লক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন