Mountain Strike Corps

সীমান্তে কেন ভারতীয় সেনার ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’ হল না, উঠছে প্রশ্ন

চিনের ভিতরে ঢুকে হামলার চালানো এই বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্য ছিল না। আসল লক্ষ্য ছিল, ভারতের এলাকা দখল করলে জবাব দেওয়া। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৪:৩২
Share:

প্রশ্ন উঠেছে, স্ট্রাইক কোর তৈরি হলে কি চিন এত সহজে পার পেয়ে যেত!—ছবি সংগৃহীত।

মনমোহন সরকারের শেষবেলায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ড্রাগনের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনার পৃথক মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর তৈরি হবে। ২০১৩-য় ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ৯০ হাজার অফিসার ও জওয়ান নিয়ে এই বাহিনী মঞ্জুর হয়। কিন্তু মোদী জমানায় দু’বছর আগে অর্থের অভাবে সেই প্রকল্প থমকে গিয়েছে।

Advertisement

লাদাখে চিনের সেনার হাতে ২০ জন অফিসার ও জওয়ান নিহত হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, স্ট্রাইক কোর তৈরি হলে কি চিন এত সহজে পার পেয়ে যেত! প্রাক্তন সেনা কর্তাদের মতে, পরিকল্পনা মাফিক বিশেষ বাহিনী তৈরি থাকলে চিনকে লাদাখের ঘটনার বড় মূল্য চোকাতে হত।

সেনাবাহিনীর দুই প্রাক্তন শীর্ষকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিনোদ ভাটিয়া ও অনিল আহুজা আজ যুক্তি দিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করছে। এই কারণেই ভারতীয় সেনার ‘অফেনসিভ-ডিফেন্স’ ক্ষমতা গড়ে তুলতে মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। লক্ষ্য ছিল, এই বাহিনীই ৩,৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-চিন সীমান্তে ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’-র গতিবিধির উপরে নজর রাখবে। গালওয়ান উপত্যকার মতো পরিস্থিতি হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। ২০১৩-য় দেপসাং উপত্যকায় চিন ভারতের এলাকায় ঢুকে প্রায় দেড় মাস বসেছিল। দুই বাহিনীর সংঘাত হয়। তার পরেই মাউন্টেন কোর গড়ার সিদ্ধান্ত। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তারা বলছেন, চিনের ভিতরে ঢুকে হামলার চালানো এই বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্য ছিল না। আসল লক্ষ্য ছিল, ভারতের এলাকা দখল করলে জবাব দেওয়া।

Advertisement

কিন্তু তার পরে কী হল?

পূর্ব ভারতে মাউন্টেন কোরের প্রথম ডিভিশন তৈরির পরে ২০১৭-১৮য় পঠানকোটে দ্বিতীয় ডিভিশন তৈরির কাজ অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মোদী সরকারের প্রয়াত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর জানিয়েছিলেন, এর পিছনে এত টাকা খরচ করার থেকে সেনার আধুনিকীকরণের জন্য টাকা খরচ করা ভাল।

আরও পড়ুন: সামরিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চিনকে পিছু হটানোর চেষ্টায় ভারত

কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের আক্ষেপ, ‘‘টাকা মঞ্জুর হলে এত দিনে ৯০ শতাংশ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যেত। চিনকে যাতে অনুপ্রবেশের জন্য মূল্য চোকাতে হয়, তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা তৈরি হত।’’

ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘২০১৭-য় মোদী সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে। বর্তমান চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, সে সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত মুখ ফিরিয়ে নেন। মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর তৈরি হলে চিন ভারতে ঢুকে আমাদের জওয়ানদের মেরে যেতে পারত না।’’ ভারত এখন চিন সীমান্তে পরিকাঠামো তৈরির দিকে নজর দিয়েছে। তা নিয়েই লাদাখে সংঘাত শুরু হয়। মনীশের যুক্তি, ‘‘বাহিনী ছাড়া পরিকাঠামো তৈরি চিনকে আমাদের এলাকায় ঢোকার ফ্রি পাস দিয়ে দেওয়া।’’

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনের বৈঠকও নিষ্ফল, লাদাখে জোর বাড়াচ্ছে চিন

সেনা সূত্রের খবর, সেনাপ্রধান থাকার সময়ই জেনারেল রাওয়ত নতুন ‘ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ’ তৈরির পরিকল্পনা করেন। পানাগড়ে অবস্থিত সেনার ১৭ কোর তাই এখন অন্য চেহারায় কাজ করছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭ কোরের অধীনে তিনটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ’ তৈরি হবে। প্রতিটি গ্রুপে একজন মেজর জেনারেলের অধীনে চার হাজার জওয়ান থাকবে। এর লক্ষ্য হবে চিন সীমান্তের পার্বত্য এলাকায় দ্রুত ও নিয়ন্ত্রিত হামলা চালানো। গত অক্টোবরে ‘হিম বিজয়’ অনুশীলনে এই মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন