থিয়েটার অলিম্পিক্সে সংস্কৃতি কূটনীতি

কালিদাস, ভবভূতি, শূদ্রকের দেশে এখন রমরম করে চলছে আন্তর্জাতিক নাটকের এক মহাযজ্ঞ। না,  যজ্ঞ বললে ভুল হয়ে যাবে। ‘থিয়েটার অলিম্পিক্স-২০১৮’-এ প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০১
Share:

সারি-সারি: দিল্লিতে থিয়েটার অলিম্পিক্সের আসর। —নিজস্ব চিত্র।

পঁয়ত্রিশটি দেশ, একান্ন দিন, সতেরোটি শহর, চারশো পঁয়ষট্টিটি নাটক!

Advertisement

কালিদাস, ভবভূতি, শূদ্রকের দেশে এখন রমরম করে চলছে আন্তর্জাতিক নাটকের এক মহাযজ্ঞ। না, যজ্ঞ বললে ভুল হয়ে যাবে। ‘থিয়েটার অলিম্পিক্স-২০১৮’-এ প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।

১৯৯৩ সালে গ্রিসে এই অভিনব প্রতিযোগিতার সূচনা। ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে ৭টি প্রতিযোগিতা। ভারতে এই প্রথম। ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ (এনএসডি) এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে ১৭ ফেব্রুয়ারি লালকেল্লায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এই উৎসব। যার শেষ এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুম্বইয়ে। ‘‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার এবং ভারতের থিয়েটারকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরার এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর হয় না’’, জানাচ্ছেন এনএসডি-র চেয়ারপার্সন রতন থিয়াম। এনএসডি-র নিজস্ব মঞ্চটি ছাড়াও দিল্লিতে তিনটি পৃথক থিয়েটার হল ভাড়া করা হয়েছে এই উৎসবের জন্য। এ ছাড়া কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, গুয়াহাটি, ইম্ফল-সহ মোট ১৭টি ছোট বড় শহরে একই সঙ্গে একাধিক মঞ্চে চলছে বিভিন্ন দেশের নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, পরিচালকের মুখোমুখি দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। বিভিন্ন ভাষার নাটক অভিনয়ের সময় মঞ্চের দু’পাশে রাখা হয়েছে বড় স্ক্রিন। অভিনেতাদের সংলাপ তৎক্ষণাৎ ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে যাচ্ছে পর্দায়।

Advertisement

এনএসডি-র ডিরেক্টর ওয়ামান কেন্দ্রে জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা সবসময়ই গর্ব করে বলি ভারতের থিয়েটারের ঐতিহ্য দু’-পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। কিন্তু তাকে আন্তর্জাতিক রঙ্গমঞ্চে বড় করে তুলে ধরারও একটা দায়িত্ব থেকে যায়। ভারতীয় থিয়েটারের বিশ্বের সামনে দাঁড়ানোর একটা প্রয়োজনীতা ছিলই। এই উৎসবের মাধ্যমে সেটা হচ্ছে।’’ শুধু নাটকই তো নয়। ভারতের বিভিন্ন জনজাতির নানা সাংস্কৃতিক দিক, লোকনাটক, পুতুল নাচ, ম্যাজিক শো-এর ব্যবস্থা থাকছে প্রতিটি নাটক শুরু হওয়ার আগে। এনএসডি-র ছাত্রদেরও খোলা মঞ্চে নানা ধরনের ‘শো’ চলছে।

এ বারের অলিম্পিক্স-এর থিম ‘দ্য ফ্ল্যাগ অব ফ্রেন্ডশিপ’। বসুবৈধ কুটুম্বকম-এর কূটনৈতিক দিকটি গত এক দশক ধরে ভারতের বিদেশনীতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। এই গোটা উৎসবের বাজেট ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। যার অনেকটা ভার বহন করতে হচ্ছে ভারতকে (বাকিটা দিচ্ছে থিয়েটার অলিম্পিক্স ফান্ড)। এনএসডি-র কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করছেন, সাংস্কৃতিক দিকে যতই টাকাই ঢালা হোক না কেন, আজকের নয়া-উদারনীতির যুগে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং জরুরি। ভারতের সাংস্কৃতিক শক্তিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সামনে তুলে ধরার জন্য এর আগে বিদেশ মন্ত্রক একটি পৃথক বিভাগও (পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি) তৈরি করেছিল। পরে তা উঠে গেলেও সংস্কৃতি মন্ত্রকের মাধ্যমে তাকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন