রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতে দুদিনের সফর সেরে ফিরে গিয়েছেন। এ বার তাঁর এক শত্রু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকেও ভারতে আনার কথা ভাবছে নয়াদিল্লি। ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেই সফরের আয়োজন পাকা হয়ে যেতে পারে। সূত্র উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই তথ্য জানিয়েছে।
২০২২ সাল থেকে পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনের। ভারত বরাবর জানিয়ে এসেছে, তারা নিরপক্ষে নয়। তারা আসলে শান্তির পক্ষে। সেই কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যেই এ বার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির ভারত সফরের আয়োজন করা হতে পারে। এর আগে ইউক্রেন থেকে ঘুরে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার জ়েলেনস্কির ভারতে আসার পালা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভারত থেকে ঘুরে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই জ়েলেনস্কিকে যদি ভারতে আনা যায়, তবে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের শান্তিকামী নীতির পক্ষে জোরালো বার্তা যাবে। সেই কারণেই জ়েলেনস্কিকে ভারতে আনতে সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই জ়েলেনস্কি আসতে পারেন নয়াদিল্লিতে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে মোদী রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার ঠিক এক মাসের মাথায় অগস্টে গিয়েছিলেন ইউক্রেনে। সূত্রের দাবি, ইউক্রেনের আধিকারিকদের সঙ্গে জ়েলেনস্কির ভারত সফরের বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নয়াদিল্লির আলোচনা চলছে। পুতিন ভারতে আসার অনেক আগেই যোগাযোগ করা হয়েছে জ়েলেনস্কির দফতরের সঙ্গে। তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। ফলে সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণাও হয়নি।
জ়েলেনস্কির ভারত সফরের সময় এবং সম্ভাবনা নির্ভর করছে একাধিক বিষয়ের উপর। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে দীর্ঘ দিন ধরে সচেষ্ট। তাঁর শান্তির পরিকল্পনা কত দূর এগোল, যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা বাস্তবায়িত করা গেল, ভারতে আসার জন্য রাজি হওয়ার আগে তা বিবেচনা করতে পারেন জ়েলেনস্কি। তা ছা়ড়া, ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। সেখানে জ়েলেনস্কি বর্তমানে যথেষ্ট চাপে আছেন। যুদ্ধ সংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও রয়েছে দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগ।
জ়েলেনস্কি নিজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে এর আগে কখনও ভারতে আসেননি। অতীতে ইউক্রেন থেকে মাত্র তিন বার প্রেসিডেন্ট পদাধিকারী ভারতে এসেছেন— ১৯৯২, ২০০২ এবং ২০১২ সালে।
আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির ধারণা, রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে ভারত অনায়াসে পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিতে পারে। শান্তিস্থাপনের জন্য তাঁকে রাজি করাতে পারে। রাশিয়া থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যনীতি থেকে পিছিয়ে আসেনি নয়াদিল্লি। বরং তার পর থেকে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক অবস্থানে ভারসাম্য বজায় রাখতেই জ়েলেনস্কির ভারত সফর প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।