নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
পুলওয়ামা-কাণ্ড এবং পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ফের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় বিমানহানায় ঠিক ক’জনের মৃত্যু হয়েছে? বোমাটা কি ঠিক জায়গায় পড়েছে? দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনের আগে পরিকল্পিত আস্ফালন চলছে— ইঙ্গিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গত পাঁচ বছরে পঠানকোট বা উরিতে জঙ্গি হামলার পরে এই রকম পদক্ষেপ কেন করেনি ভারত সরকার? প্রশ্ন তাঁর।
২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে দিল্লি গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল অর্থাৎ বুধবার সংসদের অ্যানেক্স ভবনে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দেন তিনি। সেই বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। ভারত-পাক উত্তেজনাকে নরেন্দ্র মোদীরা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলে সেই বৈঠকেই সরব হয়েছিলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। বৈঠকে বিরোধী দলগুলির যৌথ বিবৃতিতে শাসক দলের সমালোচনা করা হয় এবং ভারত-পাক উত্তেজনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর আরও চাঁছাছোলা। এ দিন ফের তিনি বলেছেন, ‘‘জওয়ানদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি আমরা কেউ পছন্দ করি না।’’
নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে চাইতেই পারি, বিমানহানায় কতজন মারা গিয়েছে? কারা মারা গিয়েছে? কিছুই তো আমরা জানতে পারিনি।’’ ভারতের বিমানহানায় পাকিস্তানে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন। ৩০০জন, ৩৫০ জন, ৪০০ জন— সংবাদমাধ্যমে এমন নানা সংখ্যা ঘোরাফেরা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলিকে ‘একতরফা’ তথ্য ‘খাওয়ানো’ হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের যথেষ্ট প্রমাণ আছে, বলল ভারতীয় সেনা
আরও পড়ুন: দিনভর চাপানউতোর, বিকেলে মুক্তির খবর এল অভিনন্দনের
‘‘আমরা জানতে চাইতেই পারি, কতজন মারা গিয়েছে? বোমাটা কোথায় ফেলা হয়েছে? বোমাটা ঠিক জায়গায় পড়েছে কি না?’’ বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি বিদেশি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি বোমাটা ঠিক জায়গায় পড়েনি, বোমাটা মিস হয়েছে এবং মানুষ মারা যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, ১ জন মারা গিয়েছে।’’
তাঁর নিশানায় যে ভারতীয় বাহিনী নয়, তাঁর নিশানায় যে বিজেপি, সে কথা অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ‘‘আমরা সব সময় বাহিনীর পাশে রয়েছি, কিন্তু বাহিনীকে স্বাধীন ভাবে নিজেদের কথাটা বলতে দেওয়া হোক,’’ বলেন মমতা।
ঠিক নির্বাচনের আগেই কেন পুলওয়ামায় হামলাটা হল, সে প্রশ্ন আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছিলেন। এ দিনও একই প্রশ্ন তিনি তুলেছেন। হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হল না, প্রশ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। নির্বাচনের ঠিক আগে বলেই কি এত বড় সামরিক পদক্ষেপ? প্রশ্ন মমতার।
গত পাঁচ বছরে পঠানকোট এবং উরির মতো ঘটনা ঘটেছে কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত বড় পদক্ষেপ হয়নি, এ বার নির্বাচন সামনে বলেই কি এত বড় পদক্ষেপ? এই প্রশ্নও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছেন। দেশের স্বার্থে যুদ্ধ করতে হলে তাঁর আপত্তি নেই— বলেন মমতা। তার সঙ্গেই বলেন, ‘‘রাজনীতির প্রয়োজনে, একটা নির্বাচন জেতার জন্য যুদ্ধ আমরা চাই না। আমরা শান্তি চাই।’’
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)