Sheikh Hasina Verdict

হাসিনাকে ফেরত চায় ঢাকা, ইউনূসদের ‘আহ্বানে’ কি সাড়া দেবে নয়াদিল্লি? বিবৃতি জারি মোদী সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের

মানবতাবিরোধী অপরাধে সোমবার হাসিনা এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। তবে তাঁরা কেউই বাংলাদেশে নেই। রয়েছেন ভারতে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

(বাঁ দিকে) বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরেই ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাদের ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে রীতিমতো বিবৃতি জারি করে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া প্রত্যপর্ণ চুক্তির কথাও নয়াদিল্লিকে মনে করিয়ে দিয়েছে ঢাকা। মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের বিবৃতির পর পরই প্রতিক্রিয়া দিল ভারত সরকার। তারা জানায়, হাসিনাদের বিরুদ্ধে রায় সম্পর্কে অবগত!

Advertisement

মানবতাবিরোধী অপরাধে সোমবার হাসিনা এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। তবে তাঁরা কেউই বাংলাদেশে নেই। রয়েছেন ভারতে। তাই যদি তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হয়, তবে বাংলাদেশে প্রত্যপর্ণ প্রয়োজন। তাই সাজা ঘোষণার পর পরই সেই আবেদন করা হয় ভারত সরকারের কাছে।

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানানো হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের (হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) দ্বিতীয় কোনও দেশ যদি আশ্রয় দেয়, তবে তা ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ’ হবে, যা ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল! ভারতের কাছে তাদের আবেদন, অবিলম্বে যেন হাসিনাদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ভারত সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা। বলা হয়, ‘দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে’ এটি ভারতের অবশ্যই পালন করা দায়িত্ব।

Advertisement

বাংলাদেশের আবেদনের পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ভারত কি আদৌ ইউনূসদের ‘আহ্বানে’ সাড়া দেবে? মোদী সরকারের তরফে জানানো হয়, হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্ক অবগত ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বাংলাদেশকে ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ হিসাবে উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি। বলা হয়েছে, ভারত সবসময়ে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করবে ভারত সরকার।

২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। অন্য দিকে, ঢাকার মসনদে ছিলেন হাসিনা। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অপর দেশের হাতে তুলে দেবে। এই বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিল, ন্যূনতম এক বছরের জেল হতে পারে, এমন অপরাধ করে থাকলে সেই ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা হবে। ২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে চুক্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়, কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই তাঁকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের প্রমাণস্বরূপ কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে হবে না।

যদিও হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অতীতে বার বার সেই বিষয়ে সংশোধিত প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তির কথা উল্লেখ করে হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে ‘কূটনৈতিক চিঠি’ (ভার্বাল নোট) পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করেছিল ভারত। আবার এক বার সেই প্রত্যপর্ণ চুক্তির কথা মনে করিয়ে ভারতের কাছে আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। তবে হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা এখনই খোলসা করল না ইউনূস প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement